‘ভাইগো কাইলগা (গতকাল) হাজে (সন্ধ্যায়) বাবারে লই (নিয়ে) বই (বসি) রইছি গো। বাবা আমারে উডাই (উঠায়) দিছে গো। নইতো বাবার সঙ্গে বসি থাকতাম আমি গো। আমার বাবা আমারে কই, উডি যান, তুমি কথা বললে আমার অ্যাসাইনমেন্টে ভুল হইব (হবে)। আমার বাবা বুঝি আর আমার লগে কথা কইতো নো। ও আল্লাহ গো, ও বাবা গো।’ ছেলে ইমতিয়াজ আহমেদ প্রান্তকে হারিয়ে এভাবেই আহাজারি করছিলেন মা নাজমুন নাহার মিনু।

রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড বাঞ্চানগর এলাকায় প্রান্তের বাসায় গেলে ভাইদের জড়িয়ে ধরে মা নাজমুন নাহারকে কাঁদতে দেখা যায়। তিনি বার বার ছেলের কবরের দিকে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।

পড়ালেখায় ভালো হওয়ায় পরিবারের আদরের ছেলে ছিল প্রান্ত। তার স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের জন্য কাজ করার। কিন্তু বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে অকালে প্রাণ হারায় সে।

জানা গেছে, শনিবার রাত ১০টার দিকে পৌর শহরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে লক্ষ্মীপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী প্রান্ত নিহত হয়। প্রান্ত লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ও বাঞ্চানগর এলাকার ঠিকাদার আবুল খায়েরের ছেলে। রোববার সকাল ১০টায় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।  

প্রান্তর মামা নুরুল ইসলাম বলেন, আমার ভাগ্নের স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে চাকরি করবে। কিন্তু ট্রাকের চাপায় সেই স্বপ্ন মাটির নিচে চাপা পড়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারি আইন বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি।

লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি চৌধুরী মাহমুদুন্নবী সোহেল বলেন, প্রান্তর মৃত্যুর বিষয়টি দুঃখজনক। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও প্রান্তর মতো মেধাবীদের সড়কে প্রাণ দিতে হচ্ছে। এটি চালকদের বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণেই হচ্ছে। দ্রুত সরকারি আইন অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কাজ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। আটক চালক তাদের হেফাজতে রয়েছে। তারা চালককে হস্তান্তর করলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এসপি