সেই তামান্নাকে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর অভিনন্দনপত্র
পা দিয়ে লিখে টানা চতুর্থবার জিপিএ-৫ পাওয়া তামান্না নূরাকে অভিনন্দনপত্র পাঠিয়েছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ। বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে যশোর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক অসিত কুমার সাহার মাধ্যমে মন্ত্রীর স্বাক্ষরিত অভিনন্দনপত্রটি তামান্নার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
একই সঙ্গে তামান্নার উচ্চশিক্ষা ও পরবর্তী স্বপ্নপূরণে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সব সময় পাশে থাকবে বলে অভিনন্দনপত্রে উল্লেখ করেছেন মন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
সমাজকল্যাণমন্ত্রীর অভিনন্দনপত্র হাতে পেয়ে উচ্ছ্বসিত তামান্না নূরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার জীবনে বড় প্রাপ্তি যে একজন মন্ত্রী আমার খোঁজখবর নিচ্ছেন। আমার অনেক ভালো লাগছে। আগে নিজেকে অসহায় মনে হলেও এখন নিজেকে একা মনে হচ্ছে না। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই আমার পাশে রয়েছেন। আমাকে শুভেচ্ছাপত্র পাঠানোর জন্য মাননীয় মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
তামান্নার অদম্য ছুটে চলার পথে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনীসহ সরকারের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিব দলের নেতাকর্মী খোঁজখবর নেওয়ায় পাশাপাশি তামান্নার স্বপ্নপূরণের প্রতিশ্রুতিতে খুশি তামান্নার বাবা রওশন আলীও।
তিনি বলেন, মেয়ে এত কষ্ট করেছে যে তার স্বপ্নপূরণে সবাই এগিয়ে আসছে। যা আমি জীবনে কল্পনাও করিনি। খুশিতে আমার বুকটা ভরে যাচ্ছে। ও যেন তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। সে জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।
যশোর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক অসিত কুমার সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, তামান্না নূরা আমাদের সমাজের অনুকরণীয়। সেই সঙ্গে অনুপ্রেরণার অনন্য উদাহরণ। তামান্নার স্বপ্নপূরণে পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নানাজন। তামান্নার এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সমাজসেবা অধিদফতর থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা, হুইলচেয়ার, বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা এবং শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় তামান্নাকে দেখতে যান যশোরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীবের নেতৃত্বে বোর্ডের সচিব অধ্যাপক মো. আবদুল খালেক সরকার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র, কলেজ পরিদর্শক কে এম গোলাম রব্বানি। তারা তামান্নাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি টানা চতুর্থবার জিপিএ-৫ পাওয়ায় তাকে মিষ্টিমুখ করান।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া আলীপুরের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় তামান্না নূরা। তামান্না যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। রোববার প্রকাশিত ফলাফলে এসএসসির মতো এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছেন তিনি। এর আগে তামান্না ২০১৯ সালে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া জনাব আলী খান মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে একই ফল করেছিলেন পিইসি ও জেএসসিতেও।
তারা বাবা রওশন আলী ঝিকরগাছা উপজেলার ছোট পৌদাউলিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার (ননএমপিও) শিক্ষক। মা খাদিজা পারভীন গৃহিণী। ছোট বোন মুমতাহিনা রশ্মি ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ভাই মুহিবুল্লা তাজ প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।
গত ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাসহ দুটি স্বপ্নের কথা জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন তামান্না। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেল ও সন্ধ্যায় পৃথক দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে অডিও কলে ফোন দিয়ে তামান্নাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা। একই সঙ্গে তারা তামান্নার স্বপ্নপূরণে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। প্রধানমন্ত্রী তামান্নাকে তার স্বপ্নপূরণে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করার পরামর্শ দেন। সে জন্য বুধবার সকালে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে আবেদন করেছেন তামান্না।
এ ছাড়া গত মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তামান্নার সঙ্গে মোবাইলে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। তিনি তামান্নাকে মাইক্রোবায়োলোজি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন এবং তামান্নার সঙ্গে দেখা করতে যশোরে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
জাহিদ হাসান/এনএ