জিপিএ-৫ পেয়ে মুহূর্তেই মিতালীর আনন্দ মাটি
জামালগঞ্জ কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছেন মিতালী দাস। দিনমজুর বাবার সংসারে অনেক কষ্ট করে পেরিয়েছেন উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি। এবার তিনি নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা করতে চান। তবে অভাবের সংসারে কীভাবে পড়াশোনা করবেন, সে নিয়ে চিন্তিত মিতালী।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, এবার জামালগঞ্জ কলেজ থেকে ৬৬৪ জন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৬৪৭ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪ জন। তাদের মধ্যে মিতালী দাস হচ্ছেন হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান।
বিজ্ঞাপন
মিতালী দাসের দিনমজুর বাবার নাম বাবা কানু দাস। শুষ্কু মৌসুমে অন্যের জমিতে কাজ করেন তিনি। এতে প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন শ টাকা রোজগার হয়। আর বর্ষায় কিছু ফলের ব্যবসা করেন। তাতে টেনেটুনে বছর পার হয় তার।
তিন ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সদস্য পাঁচজন। তাদের মধ্যে বড় মেয়ে মিতু দাসকে গত বছরের ফাল্গুনে বিয়ে দিয়েছেন সিলেটের কানাইঘাটে। সেখানে স্বামী-সংসার নিয়ে ভালোই রয়েছেন তিনি। দ্বিতীয় হলেন মিতালী দাস। সবচেয়ে ছোট সন্তানের নাম সাম্য দাস। সে এবার দশম শ্রেণির ছাত্র।
কিন্তু ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা ও সংসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত এখন কানু দাস। বছরে বছরে পরীক্ষার ফি, ফরম পূরণের টাকা জোগাড় করতে হাত পাততে হয়েছে আত্মীয়স্বজনের কাছে। সেখান থেকে মাঝেমধ্যে সহযোগিতা পেলেও প্রায়ই খালি হাতে ফিরতে হয়েছে তাকে। তবু শিক্ষার প্রতি তার দারুণ আগ্রহ। যে কারণে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ করেননি তিনি।
মিতালী দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, কলেজে ভর্তি হওয়ার পর এই দুই বছরে ৪টি টিউশন করেছি। প্রতি টিউশন থেকে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা করে পেয়েছি। মাস শেষে টিউশনের টাকা পেয়ে বাবাকে দিয়ে দিতাম। নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা করার কথা উল্লেখ করে মিতালী বললেন, নার্সিং পড়তে কত টাকা প্রয়োজন, জানি না। তবে আমি নার্সিংয়ে ডিপ্লোমা করে মানুষের সেবা করতে চাই। এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই।
কানু দাস বললেন, অনেক কষ্ট করে মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছি। মেয়ের ইচ্ছা এবং আমার শ্রম সার্থক হয়েছে। সবাই বলছে, আমার মেয়ে ভালো ফল করেছে। শুনে আনন্দে আমার বুক ভরে গেছে। তবে এ আনন্দ মাটি হয়ে যাবে। কারণ মেয়ের ইচ্ছা নার্সিং পড়ার। কিন্তু মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করার ক্ষমতা তো আমার নেই।
তিনি আরও বলেন, স্কুল-কলেজে যখন বেতন ও ফরম পূরণের সময় হতো, তখন মেয়েকে পড়াতে আত্মীয়স্বজনের কাছে হাত পাততাম। মাঝে মাঝে তাদের সহযোগিতা পেয়েছি। আত্মীয়স্বজন আর কত দেবে। সব সময় তো তারা টাকা দিতে পারবে না আমিও বুঝি। তাই কী করব ভেবে পাই না।
জামালগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার কলেজ থেকে এবার চারজন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তাদের মধ্যে মিতালী একজন। মিতালীর বাবা দিনমজুর। উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য তার বাবার নেই। আমি তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি। কিন্তু সহযোগিতা ছাড়া মিতালীর পড়াশোনা করা কঠিন হয়ে যাবে।
এনএ