সব প্রতিবন্ধকতাকে উড়িয়ে দিয়ে এক পায়ে লিখে এর আগে পিইসি, জেএসসি ও এসএসসিতে পেয়েছেন জিপিএ-৫। এবার এইচএসসি পরীক্ষায়ও পেয়েছেন জিপিএ-৫। যুদ্ধ জয় করে চলা তামান্না আক্তার নুরা এখন স্বপ্ন দেখছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার।

রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করলে তামান্নার এই উত্তীর্ণ হওয়ার খবর পাওয়া যায়। তার এমন সফলতায় যেমন খুশির জোয়ার বইছে পরিবারে, তেমনি পাড়া-প্রতিবেশীরাও সন্তুষ্ট। গ্রামের আর দশটা পরিবারের কাছে এখন এক আদর্শ ও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন তামান্না।

অদম্য মেধাবী তামান্নার বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে। জন্ম থেকেই তার দুই হাত ও এক পা নেই। তাই অবশিষ্ট এক পা-ই তার সম্বল। তামান্নার বাবার নাম রওশন আলী। তিনি স্থানীয় ছোট পোদাউলিয়া দাখিল মাদরাসার ননএমপিও (বিএসসি) শিক্ষক। মায়ের নাম খাদিজা পারভীন শিল্পী। তিনি গৃহিণী। পরিবারে তিন সন্তানের মধ্যে তামান্না সবার বড়। তিনি যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে পরীক্ষা দেন।

এইচএসসির ফল শুনে উচ্ছ্বসিত তামান্না জানান, তার এখন স্বপ্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। সে জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেখানে গবেষণাধর্মী কোনো বিষয়ে পড়াশোনা করে বিসিএস ক্যাডার হতে চান। তারপর দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করার স্বপ্ন পূরণ করবেন। যদিও পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েনে কীভাবে তা পূরণ হবে জানেন না তামান্না। তাই সহযোগিতার আশায় ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চিঠিও লিখেছিলেন তামান্না।

তামান্নার বাবা রওশন আলী বলেন, ছোটবেলা থেকেই তামান্নার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি উপলব্ধি করে এখন সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে গবেষক হতে চায়।

শিক্ষক রওশন আলী আরও জানান, তার আরও দুই সন্তান লেখাপড়া করছে। তিনি ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। তাই টানাপোড়েনের সংসারে বাবা হয়ে কীভাবে মেধাবী মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করবেন, তা ভেবে তিনি খুবই চিন্তিত। এ জন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।

বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সামছুর রহমান বলেন, তামান্না আমাদের কলেজের শিক্ষার্থী। তার মেধার প্রশংসা আমাদের কলেজ শিক্ষকরা সব সময় করেন। তামান্না জন্মপ্রতিবন্ধী হয়েও জয় করেছে অনেক কিছু, দেখিয়ে দিয়েছে সমাজকে। শুধু পড়াশোনা নয়, তামান্না ভালো ছবিও আঁকে। এমনকি কম্পিউটার প্রযুক্তিতেও সে দক্ষ।

তিনি আরও বলেন, জন্ম থেকেই তামান্নার দুটি হাত ও একটা পা নেই। অথচ একটা পা দিয়েই তামান্নার যুদ্ধ চলছে। আমি আশা রাখি সে ভবিষ্যতে অনেক ভালো কিছু করবে। তবে এখন সবচেয়ে বেশি দরকার সরকারের সহযোগিতা।

জাহিদ হাসান/এনএ