ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে প্রতিবাদ, মা-মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি
মানসম্মান ও লোকলজ্জার ভয়ে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্তকারীর গালমন্দ ও হুমকি-ধমকি সহ্য করেছিলেন স্কুলশিক্ষক। কিন্তু ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে প্রতিবাদ করে বসেন তিনি। এ কারণে উত্ত্যক্তকারী বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করে তাকে। এ সময় মেয়েকে বাঁচাতে মা এগিয়ে এলে তাকেও পেটানো হয়। আহত অবস্থায় মা-মেয়ে এখন কাঁতরাচ্ছেন হাসপাতালে।
এমন ঘটনাটি শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালী ইউনিয়নের পাচুরিয়া গ্রামে ঘটে।
বিজ্ঞাপন
ঘটনার শিকার স্কুলশিক্ষক তাপসী বিশ্বাস মন্দির ভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত পাচুরিয়া দক্ষিণপাড়া কালীমন্দির কেন্দ্রের শিক্ষক। তিনি পাচুরিয়া গ্রামের বজেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও রিপা রানী বিশ্বাস দম্পতির মেয়ে।
অভিযুক্ত যুবক খোকন রায় (৪০) মাগুরার দীঘা ইউনিয়নের ভিটাপাড়া গ্রামের লক্ষ্মীপদ রায়ের ছেলে। পরিবারে তার স্ত্রী ও এক মেয়ে রয়েছে।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, দীর্ঘ চার-পাঁচ বছর ধরে তিনি তাপসী বিশ্বাসকে উত্ত্যক্ত করে আসছেন। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তিনি প্রায়ই তাপসী রানীকে ইভ-টিজিংসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলেন।
মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শিক্ষক তাপসী রানী বিশ্বাসের মা রিপা রানী বিশ্বাস শনিবার বিকেলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, মেলা দিন ধরে রিপন আমার মায়েডার (মেয়ের) পেছনে লাগিচে। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণেই সে আমার মায়ের মানসম্মান নষ্ট করা কথাবার্তা কয়। আজ সকাল বেলা আমার বাড়ির সামনে আসে সে আজেবাজে ভাষা কয়ে গালিগালাজ ও বকাবাজি করে। আমার মায়ে (মেয়ে) বাড়ি থেকে বেরোয়ে এসে প্রতিবাদ করলি, সে বাঁশের খুপা (লাঠি) দিয়ে বাড়ি মারে। এতে তার ঠোঁট ফাটে যায়। আমি আগোয়ে আসলি সে বাঁশের খুপা দিয়ে আমারু মারে আহত করে। এখন দুজনই হাসপাতালে চিকিৎসে নিচ্ছি।
শিক্ষক তাপস রানী বিশ্বাস বলেন, প্রায় চার-পাঁচ বছর ধরে বখাটে রিপন আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে হাটবাড়িয়া বাজারে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অকথ্য ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। স্কুলে যাওয়ার পথে গতিরোধ করে সে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। আমি রাজি না হওয়ায় সে আমার প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
আমি এত দিন মানসম্মানের ভয়ে প্রতিবাদ করিনি। শুধু সহ্য করে গেছি। কিন্তু আজ ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আমি প্রতিবাদ করি। তার কারণেই সে আমাকে এবং আমার মাকে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারধর করে আহত করেছে। তিনি আরও বলেন, খোকন খারাপ হওয়ার কারণে এলাকার লোকজন তাকে কিছু বলে না।
তাপসী বিশ্বাসের কাকা নিধির বিশ্বাস বলেন, আমার ভাতিজি এবং ভাই-বউ দুজনেই অসুস্থ হওয়ায় আমরা তাদের নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে চলে এসেছি। পরে থানায় গিয়ে অভিযোগ দেব।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে অভিযোগ অস্বীকার করে মুঠোফোনে খোকন রায় বলেন, আমি কাউকে মারিনি। বরং তাপসীর মা আমাকে মেরে আহত করেছে।
এ বিষয়ে মাগুরা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব কুন্ডু বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এর সুষ্ঠু বিচার হওয়া প্রয়োজন। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করব।
মহম্মদপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ কে এম অপূর্ব/এনএ