পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যু দুর্ঘটনা নয়, স্বজনদের দাবি পরিকল্পিত হত্যা
কক্সবাজারের চকরিয়ায় পিকআপ ভ্যানচাপায় পাঁচ ভাইয়ের নিহতের ঘটনা মেনে নিতে পারছে না তার আত্মীয়-স্বজনরা। তারা মৃত্যুটাকে দুর্ঘটনা না বলে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছেন।
নিহত পাঁচ ভাইয়ের বোন প্রত্যক্ষদর্শী মুন্নি সুশীল দাবি করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের অবস্থান সড়ক থেকে প্রায় ৫ ফুট দূরে ছিল। প্রথমে চাপা দেওয়ার পর চালক আবার তাদের চাপা দেয়।
বিজ্ঞাপন
মৃত ডা. সুরেশ চন্দ্র সুশীলের মেয়ের জামাতা সাংবাদিক খগেশ চন্দ্র খোকন জানান, দুর্ঘটনার ১০ দিন আগে মারা যান শ্বশুর সুরেশ চন্দ্র সুশীল। তার মৃত্যুর পর থেকে ৭ ছেলে ও ২ মেয়ে বাড়িতে ছিল। বাবার মৃত্যুর পর ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানগুলো পালন করছিলেন তারা। ঘটনার দিন ভোর ৫টার দিকে তারা সাদা ধুতি পরে সারিবদ্ধভাবে হাঁটতে থাকেন। শ্মশানে যাওয়ার জন্য তারা মহাসড়কের দিকে যান। সড়ক থেকে প্রায় ৫ ফুট দূরে ৯ ভাই-বোন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পূজা দেন। ওই সময় তারা পূজার ধ্যানে ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, হঠাৎ করে পেঁয়াজ ও আলু ভর্তি কক্সবাজারগামী একটি পিকআপ ভ্যান ৯ ভাই-বোনের ওপর তুলে দেয়। পরে গাড়িটি পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ওই সময় ঘটনাস্থলে এক ভাইয়ের মৃত্যু হলেও চালক পুনরায় গাড়িটি তাদের ওপর তুলে দেন। সেখানে অনুপম সুশীল, নিরুপম সুশীল, দীপক সুশীল, চম্পক সুশীল মারা যান। ওইদিন বিকাল ৫টার দিকে আরেক ভাই শরণ সুশীল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আহত হন রক্তিম সুশীল, প্লাবন সুশীল ও বোন হীরা সুশীল।
স্বজনদের দাবি, গাড়িটি প্রথমে চাপা দিলেও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। তবে চালক কেন পুনরায় আহতদের ওপর পিষে দিলেন তা কেউ মেনে নিতে পারছে না। তাছাড়া ৯ ভাই-বোনের অবস্থান সড়ক থেকে প্রায় ৫ ফুট দূরে ছিল। এটা নিছক দুঘর্টনা নয় হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছেন তারা।
এদিকে রক্তিম সুশীল এখনো শঙ্কামুক্ত নয়। তিনি আইসিইউতে রয়েছেন। প্লাবন সুশীল মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তাদের বোন হীরা সুশীল মালুমঘাট খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার একটি পা ভেঙে গেছে।
চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজরা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের হাসিনাপাড়ায় শুক্রবার মৃত ডা. সুরোজ চন্দ্র সুশীলের বাড়িতে ছিল পাঁচ ভাইয়ের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান। নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুর চারদিন পর শ্রাদ্ধ দিতে হয়। সে হিসেবে শুক্রবার ধার্য ছিল। এদিন সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান। সেখানে পরিবারের লোকজনের পাশাপাশি স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। তারা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। এ সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতদের মা মৃণালীনি বালা সুশীল মানু।
সাইদুল ফরহাদ/এসপি