দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের মেহেরুন নেছা। করোনা মহামারিতে কোনো কাজ না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। পরে স্বামী-স্ত্রী পরামর্শ করে শুরু করেন মাশরুম চাষ। এখন তার দেখাদেখি অনেকেই মাশরুম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। 

জানা গেছে, ২০২১ সালের অক্টোবরে দিনাজপুর হট্টিকালচার থেকে ১৮৩টি মাশরুম বীজ নিয়ে শুরু করেন চাষ। শুরুটা ১০ হাজার টাকা দিয়ে হলেও এখন লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন মেহেরুন।

এদিকে প্রতিদিন তার বাড়িতে মাশরুম চাষ দেখতে আসছেন স্থানীয় অনেকে। তার উৎপাদিত মাশরুম চলে যাচ্ছে ঢাকা, দিনাজপুর, ফুলবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। প্রতি কেজি কাঁচা মাশরুম বিক্রি হয় ২০০ টাকা আর শুকনা মাশরুম বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে। তার এই উদ্যোগ দেখে মাশরুম চাষে আগ্রহ হচ্ছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে বিরামপুর শহর থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে দিনাজপুর-ঘোড়াঘাট মহাসড়কের পাশে মির্জাপুর গ্রামে ইটের প্রাচীর দেওয়া একটি বাড়ি। বাড়ির ভেতরে গেলেই চোখে পড়বে দুটি ইটের তৈরি কক্ষে ঝোলানো রয়েছে মাশরুম চাষের জন্য পলিব্যাগ, খড়, মাদার স্পন, দড়ি, হাইগ্রো মিটার স্পেয়ার, রাবার ব্যান্ডসহ বিভিন্ন উপকরণের তৈরি প্যাকেট। যার শরীর ভেদ করে বের হচ্ছে মাশরুম। আর এসব মাশরুম বিক্রির জন্য রোদে শুকিয়ে প্রস্তুত করছেন মেহেরুন।

মাশরুম চাষ দেখতে আসা রফিকুল ইসলাম নামে এক বৃদ্ধ বলেন, আমরা এগুলোকে ব্যাঙের ছাতা বলতাম। এখন শুনতেছি এর নাম মাশরুম। আগে আমরা খেতাম না। এখন মানুষ খায়।

মুসফিক নামে আরও একজন বলেন, মাশরুম চাষ আমরা দেখতে আসছি। বাইরে থেকেও অনেক লোকজন দেখতে আসে। ব্যাঙের ছাতা নামে পরিচিত হলেও এটা বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। এর দাম অনেক। 

নবীন নামে একজন বলেন,আমি মেহেরুন নেছার মাশরুম চাষ দেখলাম। অনেক ভালো লাগল। আমারও আশা আছে আমি মাশরুম চাষ করব। তার কাছ থেকে পরমার্শ নেব।

মাশরুমচাষি মেহেরুন নেছা বলেন, আমি এক দিন জানতে পারলাম আমার স্বামীর নাকি ছোট বেলায় মাশরুম চাষ করার ইচ্ছে ছিল। করোনার সময় তেমন কাজ-কর্ম না থাকায় তার সঙ্গে পরমার্শ করে মাশরুম চাষ শুরু করি। প্রথমে ১৮৩টি মাশরুম বীজ নিয়ে শুরু করলেও এখন এর পরিমাণ ৫শর বেশি। ভালো লাভ হলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে চাষ শুরু করব।

তিনি আরও বলেন, আমাদের চাষ করা মাশরুম দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। বাড়ি থেকেও অনেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। মাশরুম রান্না ও চপ করে খাওয়া যায়। এটার অনেক ঔষধিগুণ রয়েছে। মাশরুম উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করে।

বিরামপুর উপজেলা কৃষি-সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিরামপুরে প্রথমবারের মতো মাশরুম চাষ হচ্ছে। উদ্যোক্তাকে আমরা মাশরুম চাষের জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও পরমার্শ দিয়ে যাচ্ছি। এটাকে আমরা সবজি বলতে পারি। এটা বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়। বড় পরিসরে মাশরুম চাষ করার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

এসপি