এক মাসের মধ্যে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ১৩ প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির কাজে সহযোগিতার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিনজন বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। 

তারা প্রাণীগুলোর মৃত্যুর কারণ উদঘাটন এবং করণীয় বিষয়ে মতামত প্রদান করবেন। একইসঙ্গে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়েও পরামর্শ দেবেন। প্রদানের জন্য মৎস ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের তিনজন বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাকে মনোনীত করা হয়েছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এই বিশেষজ্ঞদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মনোনীত কর্মকর্তারা হলেন- কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের পরিচালক ডা. শফিউল আহাদ সরকার, ঢাকার কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারে কর্মরত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুকেশ চন্দ্র বৈদ্য ও বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় কর্মরত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নাজমুল হুদা।  

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্তী জানান, তারা কোনো তদন্ত কমিটির সদস্য নন। তবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির কাজের সহায়তা এবং পার্কের পশুদের চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে কেবল পরামর্শ দেবেন। 

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও তদন্ত কমিটির প্রধান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, আমাদের অনুরোধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে ১ ফেব্রুয়ারি ওই তিন কর্মকর্তার নামের তালিকা  আমাদের পাঠানো হয়েছিল। ইতোমধ্যে তারা আমাদের তদন্ত কাজে সহযোগিতা করছেন।

গত ২ জানুয়ারি থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে ৯টি জেব্রা এবং ২৯ তারিখে আরও দুটিসহ মোট ১১টি জেব্রা মারা গেছে সাফারি পার্কে। জেব্রা ছাড়াও সেখানে একটি সিংহী ও বাঘের মৃত্যু হয়েছে। কমিটি এসব প্রাণির মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখছে। 

জেব্রাগুলোর মৃত্যুর পরই পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১০ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি কমিটি। কমিটির সদস্য সংখ্যাও ৫ জন থেকে বাড়িয়ে ৮ জন করা হয়েছে। 

কমিটির সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছেন- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি অনুষদের অধ্যাপক মো. আবু হাদী নূর আলী খান, কেন্দ্রীয় রোগ অনুসন্ধান গবেষণাগারের (সিডিআইএল) প্রধান গোলাম আজম চৌধুরী ও জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) অঞ্জন কুমার সরকার ।

জেব্রাগুলোর মৃত্যুর বিষয়ে কমিটি আগে বলেছে, অতিরিক্ত কাঁচা ঘাস ছাড়াও স্ট্রেপ্টোকক্কাস, ই-কোলাই, স্টোডিয়াম, সালমোনিলা ও পাস্টুরেলা নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে এবং নিজেদের মধ্যে মারামারি করে জেব্রাগুলো মারা গেছে। 

এদিকে এ ঘটনায় কারও গাফিলতির প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। 

সাফারি পার্কে প্রাণীগুলোর মৃত্যু হওয়ার পর ইতোমধ্যে পার্কের প্রকল্প পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল ১০ ফেব্রুয়ারি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে পার্কের বন্যপ্রাণী সুপারভাইজার সারোয়ার হোসেনকে। 

পার্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে সারোয়ার হোসেন কোর সাফারির আফ্রিকান সাফারিতে থাকা প্রাণীগুলোর দেখভালের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার স্থলে কোর সাফারির প্রাণীদের দেখভালের দায়িত্ব পালন করবেন ওয়াইল্ডলাইফ রেঞ্জার মোহাম্মদ হেলিম রায়হান।

শিহাব খান/এনএফ