ভোটে জেতাতে নির্বাচন কর্মকর্তার গোপন চুক্তির অডিও ফাঁস
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় সপ্তম ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে চলছে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। প্রতিনিয়ত প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পাশাপশি আচরণবিধি লঙ্ঘনেরও অভিযোগ উঠেছে। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন।
ভোটগ্রহণের পাঁচদিন আগে প্রার্থী ও নির্বাচন কর্মকর্তার গোপন চুক্তির অডিও ক্লিপ ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সাড়ে চার লাখ টাকার বিনিময়ে এক ইউপি সদস্য প্রার্থীকে জিতিয়ে দেওয়ার জন্য আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান। সেই অডিও এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যেখানে টাকা-পয়সা লেনদেন এবং লক্ষ্য বাস্তবায়নে পুরো পরিকল্পনার তথ্য ফাঁস হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
উপজেলার বালারহাট ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার (সদস্য) প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ফুটবল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। ভোটযুদ্ধে সাড়ে চার লাখ টাকার বিনমিয়ে রফিকুলকে জয়ী করতে ভোটকেন্দ্র থেকে প্রতিপক্ষের লোকজনকে বের করে দেওয়া এবং ভোটের আগেই অন্তত ৩শ ব্যালট পেপার সরবরাহের চুক্তি করেছেন মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান।
ফাঁস হওয়া অডিওতে শোনা যায়, আব্দুল হান্নান ওই ইউপি মেম্বার প্রার্থীকে বোঝাচ্ছেন; নির্বাচন করতে গেলে প্রতিদিনই ১০ হাজার করে টাকা ব্যয় হবে ও তাতে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হবে। সেটি করলেও তাতে নির্বাচিত হওয়ার কোনো গ্যারান্টি নেই। বরং তার সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকার চুক্তি করলে তিনি যেভাবেই হোক তাকে জিতিয়ে দেবেন। প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও প্রশাসনের সহযোগিতায় তিনি রফিকুলকে জিতিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন এ সময়।
এ ব্যাপারে বালারহাট ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ফুটবল মার্কার মেম্বার পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি গোপন চুক্তির বিষয়টি প্রকাশ হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ভোটে জেতার জন্য দুই দফায় এলাকার একজন শিক্ষকের মাধ্যমে চুক্তি অনুযায়ী দুই দফায় ওই নির্বাচন কর্মকর্তাকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিয়েছেন।
তবে পুরো অডিও ফাঁস হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান। তার দাবি, একটি পক্ষ মিথ্যা ও ভিত্তিহীনভাবে তার বিরুদ্ধে এসব অডিও তৈরি করে ছড়িয়ে দিয়েছে। তিনি রফিকুল ইসলামের কাছ থেকে কোনো টাকা গ্রহণ করেননি। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টার কারণে রফিকুলকে প্রধান আসামি করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
এ ব্যাপারে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি. এম. সাহাতাব উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে পুরো ঘটনাটি যাচাই-বাছাই করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।
সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডটি আমরা শুনেছি। তাকে মিঠাপুকুর উপজেলা থেকে প্রত্যাহার করে নিতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বরাবর আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি, বৃহস্পতিবার (আজ) বিকেলের মধ্যে আব্দুল হান্নানকে প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই