ত্বকী হত্যার বিচার চাইলেন শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ শামীম ওসমান বলেছেন, ‘অবিলম্বে ত্বকী হত্যার বিচার করা হোক। প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে বিচার করা হোক।’
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্কে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এই দাবি জানান।
বিজ্ঞাপন
শামীম ওসমান বলেন, ‘আর কদিন পর নাটক শুরু হবে। গত পাঁচ–সাত বছর ধরে এটা চলে আসছে। ১০ জন দাঁড়ায় ৩ জন শোনে, ১০ জন বক্তা, ৩ জন শ্রোতা; তারা বলে, ত্বকী হত্যার বিচার চাই। আজকে আমি সরকারকে বলতে চাই, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই, দেশের আইন বিভাগকে বলতে চাই— ত্বকী হত্যা নিয়ে কেউ কেউ আমাকে ও পরিবারের দিকে আঙুল তুলে দেখাতে চান, আমি বলতে চাই, অবিলম্বে এই হত্যার বিচার করা হোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রয়োজনে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি করে বিচার করা হোক এবং অবিলম্বে করা হোক। আমি দাবি তুলছি এই হত্যার বিচার হওয়ার জন্য। সুতরাং আমি জানি, এই কথাগুলো বলে নারায়ণগঞ্জে অনেকে সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে চান। তাই আমি দাবি করছি, এই হত্যা বিচার করা হোক।’
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি ওসমান পরিবারকে দায়ী করে আসছেন। মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাবের তদন্তেও বলা হয়— শামীম ওসমানের ভাতিজা প্রয়াত সাংসদ নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ১১ জন মিলে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে। ওই সময় দ্রুত আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের কথা জানিয়েছিল র্যাব। কিন্ত পৌনে ৯ বছরেও আলোচিত এই হত্যা মামলায় এখনো আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেনি সংস্থাটি।
সভায় শামীম ওসমান বলেন, ‘দলের ও নেত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হলে আর শেখ হাসিনা ডাক দিলে ভীমরুলের মতো আমাদের লাখ লাখ মানুষকে ঢাকা ছুটে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে আমরা সকলে একটা পরিবার আর আমাদের মা শেখ হাসিনা। এবারও আমরা খেলব। এবার খেলা হবে কাবাডির মতো। দেখি প্রতিপক্ষ কারা থাকে। শেষমেশ আমরাই খেলায় জিতব। সময় আসছে আমাদের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি চলছে। হয়ত আগামী এক দুই মাসে একটা আঘাত করার চেষ্টা করার চেষ্টা হবে। তারা জিততে পারবে না, কারণ নেত্রীর ওপর আল্লাহর রহমত আছে।’
তিনি বলেন, ‘সেদিন সংসদের সেই ঘটনার পর আমার মনে আর কোনো কষ্ট নাই। তাই এবার নিজেদের ঝালাই দিতে চাচ্ছি। আমরাও মাঠে নামতে চাচ্ছি। এখানে যারা আছেন আমার কারও সাথে আলাপ হয়নি। গত পরশু জাতির পিতার কন্যা সংসদে একটা ভাষণ দিয়েছেন। সেখানে তিনি অনেককিছুর ইঙ্গিত দিয়েছেন। সামনে আমাদের চরম কঠিন পরীক্ষা পার করতে হবে। আমাদের দায়িত্ব এই মেসেজটা সকলের কাছে পৌঁছে দেয়া।’
সদ্য সমাপ্ত নাসিক নির্বাচন প্রসঙ্গে শামীম ওসমান বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে আমি কোথাও ছিলাম না। একজন এমপি হিসেবে সংবাদ সম্মেলন করার দরকার ছিল, করেছি। কিন্তু তারপরেও আমাকে নিয়ে কত কথা। আমি নাকি তৈমূর সাহেবকে দাঁড় করিয়েছি। কিন্তু আমার দল কিংবা দলের কোনো নেতা আমাকে বলে নাই তৈমূর সাহেবকে দাঁড় করাতে। তার পরেও আমার বিরুদ্ধে নানা কথা বলা হয়েছে, এখনো হচ্ছে।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদলের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. খোকন সাহা, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি চন্দন শীল, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল্লাহ বাদল, সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন, সোনারগাঁ থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাড. সামসুল ইসলাম ভুঁইয়াসহ মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় ২ হাজার নেতাকর্মী।
এইচকে