মাইকে ডাক শুনে কাছে এলেই ফাঁদে আটকা পাখি
মাইকে পাখির ডাকের শব্দ শুনে ছুটে আসবে পাখি। উড়ে এসে পাখিরা কাছে বসার পরই আটকে যাবে ফাঁদে। এমন অভিনব প্রতারণা করে তিন মাস ধরে পাখি শিকার করছিলেন দুই শিকারি। অবশেষে পাখিপ্রেমী স্বেচ্ছাসেবীদের হাতে জব্দ হয়েছে পাখি শিকারের প্রতারণার ফাঁদ।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার খলশিবুনিয়া বিল থেকে পাখি শিকারের ফাঁদ জব্দ করেন পাখিপ্রেমীরা।
বিজ্ঞাপন
পাখি শিকারি ঘের মালিক অমল কৃষ্ণ হালদার খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের আধারমানিক গ্রামের হরিপদ হালদারের ছেলে। অপর শিকারি কুমারেশ মন্ডল একই গ্রামের মৃত অতুল মন্ডলের ছেলে।
অমল কৃষ্ণ হালদারের খলশিবুনিয়া বিলের মাছের ঘেরে প্রতারণার মাধ্যমে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করতেন কুমারেশ মন্ডল ও অমল কৃষ্ণ হালদার। বিষয়টি নজরে আসে সেভ ওয়াইল্ড লাইফ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। সংগঠনের সদস্যরা লম্বা জাল, আটটি মাইক, দুটি ব্যাটারিসহ পাখির ডাকের শব্দ করা ডিজিটাল মাধ্যমের অন্যান্য সারঞ্জাম জব্দ করেছেন।
আধারমানিক গ্রামের বাসিন্দা এক যুবক জানান, ১৪ বিঘার ওই মাছের ঘেরের মধ্যে মাচা তৈরি করে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে পাখির ডাক শুনিয়ে পাখিকে কাছে নিয়ে আসতো তারা। কাছে আসার পরই পাখিগুলো ফাঁদে আটকা পড়তো। তিন মাস ধরে এভাবে পাখি শিকার করে আসছিল অমল কৃষ্ণ হালদার ও কুমারেশ মন্ডল। ডঙ্কুর, জলকচু, কালিম, খৈরে এসব পাখি শিকার করে সেগুলো বিক্রি করে আসছিলেন তারা।
সেভ ওয়াইল্ড লাইভের সাধারণ সম্পাদক সোহাগ হোসেন বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে পাখি শিকার করা হচ্ছে- এটি জানার পর রাতেই আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। ঘেরের মধ্যে পাখির ডাক শুনে দূর থেকে বোঝার উপায় নেই পাখির ডাকগুলো সব মাইকের। পাখিরা বিভ্রান্ত হয়ে ফাঁদে এসে আটকা পড়ে। সেখান থেকে দুটি মাইক সেট, দুটি ব্যাটারি সেট ও আটটি মাইক, দুই হাজার হাত লম্বা জালের ফাঁদসহ পাখি ধরার অন্যান্য ফাঁদ উদ্ধার করি। এ সময় সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে উদ্ধার করা পাখি শিকারের ডিজিটাল মাধ্যমগুলো বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের প্রকল্প পরিচালক মোল্লা রেজাউল করিম স্যারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় পাখি শিকারি ঘের মালিক অমল কৃষ্ণ হালদার ও কুমারেশ মন্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাদের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে।
ডুমুরিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুর রহমান বলেন, আগে একবার ওই এলাকায় পাখি শিকারের এমন অভিযোগ পেয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ফোর্স পাঠিয়ে পাখি শিকার বন্ধ করা হয়। আবারও পাখি শিকার করা হচ্ছে- এমন ঘটনা আমার জানা নেই। যেহেতু অভিযোগ পাওয়া গেছে ঘটনার তদন্ত করা হবে।
ঘটনার বিষয়ে বন অধিদফতরের উপপ্রধান বন সংরক্ষক ও প্রকল্প পরিচালক (বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল) মোল্লা রেজাউল করিম বলেন, ইতোমধ্যে ঘটনাটি আমরা জেনেছি। অভিযুক্তদের বিষয়ে তদন্ত করে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আকরামুল ইসলাম/আরএআর