‘শিক্ষামন্ত্রীর সুনাম নষ্ট করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে’
চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যাচারের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের একাংশ। বুধবারে (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ মো. ইউসুফ গাজী।
তিনি বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, ত্যাগ, ও সংগ্রামের লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে একজন সৎ ও সফল রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিত ডা. দীপু মনি। কী উদ্দেশ্যে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করে তার মতো একজন রাজনীতিবিদের সুনাম ও সম্মান নষ্ট করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে তা উদঘাটিত হওয়া প্রয়োজন। চাঁদপুরে কোনো অধিগ্রহণকৃত জমিতে কোথাও কখনো ডা. দীপু মনি বা তার পরিবারের কোনো জমি ছিল না। তার উদ্যোগে চাঁদপুরের হাইমচরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়। সেখানে জমির মূল্য শতাংশ প্রতি ৫ হাজার টাকা থেকে কয়েক লাখ টাকায় উন্নীত হয়। সরকারের নিকট থেকে ক্ষতিপূরণ লাভের আশায় বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সেখানেও ডা. দীপু মনি বা তার পরিবারের কেউ কখনো কোনো জমি ক্রয় করেননি।
বিজ্ঞাপন
লিখিত বক্তব্যে ইউসুফ গাজী আরও বলেন, যে বা যারা কোনো কোনো গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডা. দীপু মনি বা তার পরিবারকে জড়িয়ে জঘন্য মিথ্যাচার করছেন, তাদের আসল উদ্দেশ্য উদ্ঘাটিত হওয়া অতীব জরুরি। ডা. দীপু মনি ও তার বড় ভাই কখনো কোনো আর্থিক অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে কোনো দিন জড়িত ছিলেন না বা নেই। অধিগ্রহণের জন্য নির্ধারিত জমির মূল্য ইচ্ছাকৃতভাবে বৃদ্ধি করে বেশি মূল্যে জমি হস্তান্তরের ঘটনা যদি ঘটে থাকে তবে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে ডা. দীপু মনি মনে করেন।
ইউসুফ গাজী বলেন, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ বিদেশ থেকে নিয়ন্ত্রিত অনলাইন নিউজ পোর্টালে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণ বক্তব্য। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে তিনি এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না। সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো অনলাইন নিউজ পোর্টালে তার এই বক্তব্য দেশ ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের শামিল। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক নগ্ন অপপ্রচারকে উসকে দিয়ে তিনি প্রকৃতপক্ষে সরকার ও দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন বলে আমরা মনে করি।
তবে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, আমি অনলাইন নিউজ পোর্টালে যে বক্তব্য দিয়েছি, সেখানে আমি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বিরুদ্ধে কিছুই বলিনি। যেখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রশাসন যোগাযোগ করেনি। যোগাযোগ করেনি সেটা কোনো সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে- যে স্থানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করার জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেই যায়গাটি মোটেও নিরাপদ নয়। যে কোনো সময় ওই স্থানে নদী ভাঙন দেখা দিতে পারে। হাজার হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ৭০০ মিটার দূরে মেঘনা নদী। যে কোনো সময় ভাঙন দেখা দিতে পারে। মূলত এই নিয়ে আমাদের প্রথম আপত্তি।
দ্বিতীয় আপত্তি হলো- এখানে এক বছরে জমির মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে জেলা প্রশাসক একটি প্রতিবেদনও দিয়েছেন। আর জমির অধিক মূল্য নিয়ে বেশ কিছু মিডিয়া সংবাদও প্রকাশ করেছে। কিছু সংখ্যক লোক জমির দাম বাড়িয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি করেছে। এটা সরকারের টাকা, জনগণের টাকা। এই টাকা যাতে কোনোভাবেই লোপাট না হয়, এটাই ছিল আমার মূল বক্তব্য।
তিনি বলেন, আমি শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেনি। তবে তার আত্মীয়-স্বজন এবং কাছের লোকগুলো এই কাজের সঙ্গে জড়িত আছে, আমি সেই কথা বলেছি। আর এই কথা সত্য। দুই চারজন মিলে আওয়ামী লীগের একাংশ হয় না। আমি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আমার সামনে এতো বড় একটি অন্যায় কাজ হবে, তার প্রতিবাদ করা আমার নৈতিক দায়িত্ব। আর এই দায়িত্ববোধ থেকে আমি কথাগুলো বলেছি। সেই কথা যদি কারও গায়ে লাগে, তাতে আমার কিছু করার নেই। আমি সরকার ও রাষ্ট্রের পক্ষে কথা বলেছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী, অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান ভূঁইয়া, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক অজয় কুমার ভৌমিক, উপ-দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিৎ রায় চৌধুরী, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আলম মিল্টন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান প্রমুখ।
শরীফুল ইসলাম/আরএআর