ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে বঙ্গোপসাগরে। ভরা মৌসুমেও ইলিশের দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়া জেলেদের এখন সময় কাটছে ব্যস্ততায়। জালে রুপালি ইলিশের ঝাঁক হাসি ফুটিয়েছে জেলেদের মুখে। আড়তগুলোও জমে উঠেছে ইলিশ বেচাকেনায়। অভয়ারণ্য ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে ইলিশের ঝাঁক।

তবে কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার ফিশারিঘাটে ফেরা ট্রলারগুলো থেকে নামছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। এসব ইলিশের সিংহভাগই বড় ও মাঝারি সাইজের। এতে দামও ভালো পাচ্ছেন ট্রলার মালিকরা। চলতি মাসের শুরু থেকে সাগরে ইলিশ শিকারে ট্রলার পাঠালেও মালিক ও জেলেদের মনে চরম হতাশা কাজ করছিল। এর মাঝে সাগর থেকে তীরে ফেরা কয়েকটি ট্রলার জলদস্যুর কবলে পড়ে। এতে জেলেদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

তিন দিন ধরে তীরে ফেরা ট্রলার থেকে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ মেলায় সব আতঙ্ক উড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ট্রলার মালিক ও মাছ ব্যবসায়ী রোস্তম আলী। তার মতে, ট্রলারভর্তি ইলিশ নিয়ে তীরে ফিরছেন জেলেরা। ইলিশের পাশাপাশি ধরা পড়ছে রূপচাঁদাসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। আড়তগুলোতে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য।

এক কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের ১০০ পিস ইলিশ এক লাখ ১০ হাজারে বিক্রি হচ্ছে। প্রথম দুদিন এ দাম এক লাখ ৪০ হাজার পর্যন্ত উঠেছে। সে হিসেবে এক কেজি ইলিশ এক হাজার থেকে শুরু করে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। ট্রলার আরও ফিরলে দাম আরও কমবে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। টানা কয়েকমাস পর জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে ওই এলাকা। সাগর থেকে শত শত ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে একের পর এক ট্রলার। ঘাট থেকে ডিঙি নৌকায় করে মোকামে তোলা হচ্ছে নানা সাইজের ইলিশ।

কেউ বরফ ভাঙছেন, কেউ ইলিশ গুছিয়ে বরফজাত করে রফতানির জন্য তৈরি করছেন। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিতে অনেক আড়তদার ইলিশবোঝাই ট্রাক সারি করে রেখেছেন। রাতে তা রওনা হবে।

মৎস্য ব্যবসায়ী নেতা জয়নাল আবেদীন হাজারি বলেন, অনেক দিন মাছ শিকার বন্ধ থাকায় এ সেক্টরের সঙ্গে থাকা মানুষগুলোর কষ্টে দিন গেছে। তার ওপর করোনার দুর্যোগ চলছে। এখন আল্লাহর রহমতে সাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছ প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সংশ্লিষ্টদের কষ্ট দূর হবে বলে আশা করছি।

কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জানে আলম পুতু জানান, নিষেধাজ্ঞাকালে মৎস্য সংশ্লিষ্টরা ধার দেনায় চলেছেন। মাছ বেশি পাওয়া অব্যাহত থাকলে দেনা শোধ করে ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে ব্যবসায়ী ও ফিশিং ট্রলার মালিকরা।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ম্যানেজার মো. এহসানুল হক বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দীর্ঘ দিন পর প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। ফিরে আসা ট্রলারগুলো কাঙ্ক্ষিত মাছ পাচ্ছে। এতে মাছের পরিমাণ ও রাজস্ব উভয়ই বৃদ্ধি পাবে।

এমএসআর