চারটি বাড়ির মালিক, তবু বাড়িছাড়া কফিল উদ্দিন
স্ত্রী ও ছেলের নির্যাতনের শিকার হয়ে বাড়িছাড়া হয়ে আছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের বাসিন্দা কফিল উদ্দিন। চারটি বাড়ির মালিক হওয়া সত্ত্বেও এখন পথে পথে ঘুরছেন কুয়েতফেরত এই ব্যক্তি।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে সম্পত্তির জন্য নিজের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ও ছেলে সাইফুল ইসলামের করা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন কফিল উদ্দিন।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কফিল উদ্দিন বলেন, ১৯৮৯ সালে আমার বড় ভাই আব্দুল মজিদ মারা যাওয়ার পর ১৯৯২ সালে তার স্ত্রী হোসনে আরা বেগমকে আমি বিয়ে করি। ভাইয়ের মৃত্যুর সময় তার চার ছেলে ও এক মেয়ে ছোট ছিল। আমি তাদের আদর-স্নেহ দিয়ে বড় করেছি। এর মধ্যে আমারও এক ছেলে সন্তান হয়েছে। আমার ভাইয়ের চার ছেলেকেই আমি নিজের টাকায় বিদেশে পাঠিয়েছি। আমি দীর্ঘ ২৬ বছর কুয়েতে প্রবাসজীবন কাটিয়ে ২০১৯ সালে দেশে চলে আসি।
আমি প্রবাসে থাকা অবস্থায় প্রতিবারই দেশে ছুটিতে আসার পর জয়গা-জমি কিনেছি। ২৬ বছর প্রবাসে থেকে কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে এলাকায় চারটি বাড়ি, স্থানীয় ধারিয়ারচর বাজারে একটি দোকান এবং ১৭ কানি (১ কানি = ২৪ কাঠা) জমি কিনেছি। আমি দেশে একেবারে চলে আসার আগেরবার যখন ছুটিতে এসেছিলাম, তখন একটি জমি কেনার জন্য আমার স্ত্রীর কাছে ১০ লাখ টাকা দিয়ে গিয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, আমি দেশে আসার পর আমার নিজের ছেলে সাইফুল ইসলাম ব্যবসার জন্য টাকা দিতে আমাকে চাপ দিতে থাকে। পরে ১২ লাখ টাকা খরচ করে স্থানীয় বাজারে তাকে একটি কাপড়ের দোকান করে দিই। আমার স্ত্রীর কাছে জমি কেনার জন্য দিয়ে যাওয়া ১০ লাখ টাকার হিসাব চাইলে হিসাব না দিয়ে উল্টো তার ও আমার ছেলে সাইফুলের নামে জায়গা-সম্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। তারা সব সম্পত্তির দলিল নিজেদের কবজায় নিয়ে নেয়। আমি তাদের বলি যে আগে আমার সম্পত্তির দলিল বুঝিয়ে দাও, এরপর আমি সেগুলো বণ্টন করে দেব। কিন্তু তারা রাজি না হয়ে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। বিদেশে থাকা আমার ভাইয়ের চার ছেলের সলাপরামর্শে তারা আমার ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, আমি খেলাম কি না, শরীর ভালো কি না, সেটার খবর নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করে না আমার স্ত্রী ও ছেলে। সাড়ে পাঁচ মাস আগে আমার ভাগ্নির বাড়ি থেকে আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে আসে। এরপর ঘরে আটকে রেখে সস্পত্তি লিখে দেওয়ার জন্য শারীরিক নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে আমাকে ট্যাংকের সঙ্গে মেশানো ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ফেলে। পরে এ অবস্থায় আমার টিপসই নিয়ে কিছু সম্পত্তি তাদের নামে লিখে নেয়।
এ বিষয়ে আমি বাঞ্ছারামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। এরপর থেকেই আমি বাড়িছাড়া। পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে আমার স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করি। মামলার পর থেকে আমাকে মারার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছে তারা। আমার নিজের ঘর-বাড়ি থাকা সত্ত্বেও পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। আমি আমার ওপর যে অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে, সেটির বিচার চাই। আমার সারাজীবনের কষ্টার্জিত অর্থে গড়া সম্পত্তিগুলো ফেরত চাই। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সহযোগিতা চাই।
তবে বাবাকে নির্যাতন করে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে কফিল উদ্দিনের ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা নিজের ইচ্ছায় আমাদের সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন। বাবাকে কখনোই সম্পত্তির জন্য নির্যাতন করা হয়নি।
আজিজুল সঞ্চয়/এনএ