ছেলের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন মা-বাবা
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তালতলার স্কুলছাত্র আবু হুরায়রার পাঁচ দিনেও কোনো সন্ধান মেলেনি। এদিকে আবু হুরায়রা নিখোঁজের ঘটনাকে কেন্দ্র এলাকায় জন্ম নিয়েছে নানা ধরনের কুসংস্কারমূলক বিশ্বাস। তাকে জিনে তুলে নিয়েছে বলে গুঞ্জন ওঠে।
আবু হুরায়রার পরিবারের লোকজনও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে স্থানীয় কথিত এক কবিরাজের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে আবু হুরায়রাকে উদ্ধারে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানায় পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
আবু হুরায়রার এলাকার ভুট্টা ব্যবসায়ী ও কৃষক আবদুল বারেকের ছেলে। পরিবারে রয়েছে তার ছয় বোন। আবু হুরায়রা এ বছর লটারির মাধ্যমে তৃতীয় শ্রেণি ভর্তির সুযোগ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ভি জে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, ১৯ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে আবু হুরায়রা পার্শ্ববর্তী বাড়ির রনজু হক নামের এক প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়তে যায়। ওই শিক্ষকের ঘরে বইব্যাগ রেখে সে বাইরে বের হয়। এরপর থেকে তাকে পাওয়া যায়নি। ওই দিন সন্ধ্যায় পরিবারের লোকজন খুঁজতে বের হয়। রাতে পুলিশকে খবর দেয় তারা। এলাকায় মাইকিংও করা হয়। পরে ধারণা করা হয় বাড়ির পাশে পুকুরে পড়েছে, সে জন্য ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা এসে পুকুরে দীর্ঘসময় ধরে তল্লাশি করেন। তবু সন্ধান মেলেনি তার।
তারা আরও জানান, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি শিশু আবু হুরায়রার। গ্রামের সব মানুষের মুখে মুখে একই কথা, আবু হুরায়রাকে জিনরা তুলে নিয়ে গেছে। তাকে জিনের মাধ্যমে ফেরত দেওয়ার জন্য নাকি সিরাজগঞ্জ জেলার কথিত এক কবিরাজ ৫০ হাজার টাকার দাবি করেছেন। তাকে ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দেয়াও হয়েছে। ছেলে ফেরত পাওয়ার পর আরও ২০ হাজার দেয়া লাগবে।
তবে টাকা দেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও সিরাজগঞ্জের ওই কবিরাজের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার কথা স্বীকার করেছেন শিশু আবু হুরায়রার বাবা আবদুল বারেক। তিনি বলেন, ছেলে ফেরত পেলে টাকা দিতে কোনো আপত্তি নেই আমার। ওই কবিরাজের মোবাইল নম্বরটা চাইলে তিনি দিতে অস্বীকৃতি জানান।
তবে কেউ কোনো মুক্তিপণও চায়নি। তার একমাত্র ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে আকুতি করেন। ছেলের হারানোর পর থেকে তারা এখন পাগলপ্রায়। খাওয়াদাওয়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম বলে জানান তিনি।
এদিকে গ্রামবাসীরা জানিয়েছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে একইভাবে গ্রামের কৃষক হায়াত আলী (৭০) নিখোঁজ হয়েছিলেন। ঘটনার পাঁচ দিন পর সন্ধ্যায় তাকে মাঠে পাওয়া যায়। পরে গ্রামবাসীর মনে বিশ্বাস জন্ম নেয় যে ওই কবিরাজের মাধ্যমে জিনরা রেখে গিয়েছিল। এসব গুঞ্জনে পরে আসল ঘটনায় ধামাচাপা পড়ে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সবকিছু মাথায় রেখেই শিশু আবু হুরায়রাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। যে শিক্ষকের কাছে ব্যাগ রেখে বের হয়ে নিখোঁজ হয়েছে, ওই শিক্ষককেও সন্দেহে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া তার বাবার সঙ্গে গ্রামের কারও কোনো ধরনের বিরোধ আছে কি না, সব আমরা খতিয়ে দেখছি।
আফজালুল হক/এনএ