রাস্তায় পরীক্ষা দিলেন শিক্ষার্থীরা
ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১১টা। শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে রেকর্ড ফাইল। তাতে প্রবেশপত্র, কলম, পেন্সিল ও স্কেল। সামাজিক দূরত্ব মেনে পরীক্ষায় বসলেন পরীক্ষার্থীরা। তবে পরীক্ষা কেন্দ্রে নয়, তারা বসেছিলেন রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এলাকার রাস্তায়।
তারা সবাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। পড়েন রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তাদের অনার্স চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলমান। কিন্তু করোনায় পরীক্ষা স্থগিত।
বিজ্ঞাপন
একদিকে, পরীক্ষা চলছে। তখনো রাস্তায় মানববন্ধনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদের কারো কারো পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ হয়েছে। পরীক্ষার প্রস্তুতিও সেরে ফেলেছে। সেই পরীক্ষায় ঝুলে গেছে।
দাবি বাস্তবায়নে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বৃহস্পতিবার থেকেই শিক্ষার্থীরা এই দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন। দাবি আদায়ে প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনে নামার ঘোষণাও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের আহ্বায়ক ও রাজশাহী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থী আব্দুল হাই বলেন, আমরা ২০২০ সাল থেকে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। আর এক সপ্তাহ পরেই চাকরি জীবনে যাওয়ার প্রস্ততি নিতে পারতাম। অনেকের পারিবারিক অবস্থা খুবই দুর্বিষহ। পরিবারের কাছে মুখ দেখাব কীভাবে।
পরবর্তী কর্মসূচি হিসেবে আহ্বায়ক আব্দুল হাদি বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যদি চলমান ও সূচি প্রকাশ হওয়া সকল পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না আসলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঞ্চলিক অফিস ঘেরাও হবে। সংশ্লিষ্টরা আমাদের দুঃখ দুর্দশার কথা ভেবে জরুরি সিদ্ধান্ত নেবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রতীকী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন নগরীর নিউ ডিগ্রি কলেজের শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থী ইয়াসির আরাফাত সাগর। তিনি বলেন, এর আগেও করোনার কারণে একেকটি বর্ষের শিক্ষার্থীরা তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত সেশন জটে পড়েছে। এবার যে দুই সপ্তাহ পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে সেটা নিয়েও আমরা আশাহত।
নিউ ডিগ্রি কলেজের শেষ বর্ষের আরেক পরীক্ষার্থী আব্দুর রহিম বলেন, আমরা পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়রানিতে আমরা অতিষ্ট। অবিলম্বে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সকল কোর্সের চলমান ও সূচি প্রকাশ হওয়া পরীক্ষাগুলোর সূচি প্রকাশ করা হোক।
প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ টেনে রাজশাহী কলেজের শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থী রুহানা তাসকিয়া বলেন, দেশের সকল প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বশরীরে ও অনলাইন পরীক্ষা নিলেও আমাদের ক্ষেত্রে এসব কেউ ভাবেই না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু চললেও পরীক্ষা কেন নয়- প্রশ্ন রাখেন এই শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন রাজশাহী কলেজের ২য় বর্ষের পরীক্ষার্থী ফেরদৌস রহমান জয়। তার ভাষ্য, আমরা ২০১৯ সাল থেকে অনার্স ২য় বর্ষে আছি। ২য় বর্ষেই যদি চার বছর লাগে অনার্স শেষ করতে কত বছর লাগবে? সমবয়সীদের অনেকে প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সের গন্ডি শেষ করেছে বা শেষ পর্যায়ে। অথচ আমরা ২য় বর্ষেই পড়ে থাকতে বাধ্য হয়েছি।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এমএএস