মাস্কে অনীহা, নেই আক্রান্তের ভয়
করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা উত্তরের বিভাগীয় শহর রংপুর ছাড়াও লালমনিরহাট ও দিনাজপুর রয়েছে সংক্রমণ ঝুঁকির তালিকায়। এই তিন জেলাকে ইয়োলো জোন (মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ) এলাকা বলা হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে নেই কোনো আতঙ্ক।
এমনকি সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী কোথাও চলছে না কার্যক্রম। বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার কথা থাকলেও হাটবাজার, পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত সবখানেই তা উপেক্ষিত। স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার নীতি অমান্য করে চলছে সভা-সমাবেশ, উৎসবসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম।
বিজ্ঞাপন
করোনার শুরুর দিকে প্রথম দুই ধাপে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে পুলিশি চেকপোস্ট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল থাকলেও এবার ওমিক্রমন ঝুঁকিতে আগের মতো তৎপরতা নেই। রংপুর জেলা প্রশাসন থেকে মাস্ক বিতরণ ছাড়া নতুন বিধিনিষেধ প্রতিপালনে তেমন কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা যায়নি। যেন সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং প্রশাসনের নমনীয়তায় সরকারের বিধিনিষেধ ও নির্দেশনা এখন কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ।
সরেজমিনে রংপুর নগরের সিটি বাজার, মেডিকেল মোড়, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, দর্শনা মোড়, মর্ডান মোড়, শাপলা চত্বর, কামার পাড়াসহ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কারো মধ্যে তেমন করোনা ভীতি নেই। নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা গুনতে হবে এমন ভাবনাটাও কাজ করছে না। বরং সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে।
দেখা গেছে নগরের সিটি বাজার সংলগ্ন এলাকা ও বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে মানুষের জটলা। রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ছাড়াও দূরপাল্লার অন্যান্য যাত্রীবাহী পরিবহনে যাত্রীদের ঠাসাঠাসি করে উঠানো হচ্ছে। যাত্রী থেকে শুরু করে পরিবহন খাত সংশ্লিষ্ট কেউই ঠিকমতো স্বাস্থ্যগত সুরক্ষার নীতি মানছেন না। মাস্ক থাকলেও কারও হাতে, আবার কারও পকেটে। তবে হাট-বাজারে বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই।
নগরের মর্ডান মোড়ে কথা হলে ব্যাটারিচালিত অটোচালক রিয়াজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মাইনসে (মানুষ) আগের মতো এ্যলা (এখন) করোনাক ভয় পায় না। টিকা নিয়্যা মাইনসের সাহস আরও বাড়ছে। মুখোত মাস্কও পরে না।’ এ সময় গাড়িতে একসঙ্গে আটজন যাত্রী নিয়ে ভাড়ায় যাওয়া প্রসঙ্গে এই অটোচালক বলেন, ‘কম যাত্রী নিয়্যা ভাড়া মারলে তো লস (ক্ষতি)। মহাজনোক (গাড়ির মালিক) দিমো কি, আর হামার সংসার চলবে কেমন করি? সোগ (সব) সময় তো যাত্রী উঠে না।’
রংপুর সিটি বাজার দেখে বোঝার উপায় নেই দেশে নতুন করে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে মানুষের মধ্যে বাড়তি কোনো সতর্কতা চোখে পড়ছে না। একই চিত্র নগরের নবাবগঞ্জ বাজার, বেতপট্টি, পায়রা চত্বর, কাচারি বাজার, জাহাজ কোম্পানি মোড় এলাকাসহ ব্যবসাপ্রধান এলাকাগুলোতে। এসব বাজারের দোকানগুলোতে মানুষ গাদাগাদি করে কেনাকাটা করছে। অধিকাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। কারও কারও মুখে মাস্ক থাকলেও এখনো সেই আগের মতো তা থুতনিতে নামানো।
এদিকে নতুন বিধিনিষেধ শুরুর প্রথম দিন বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) রংপুর জেলা প্রশাসন ও মিঠাপুকুর উপজেলা প্রশাসনকে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সচেতনতামূলক প্রচারণা করতে দেখা যায়। তবে নাগরিক সচেতনতা তৈরিতে সরকারিভাবে জোরালো প্রচার প্রচারণা চালাতে দেখা যায়নি। এ কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে মানুষের মধ্যে বাড়তি কোনো সতর্কতাও চোখে পড়ছে না। আবার সাধারণ মানুষ নতুন বিধিনিষেধ সম্পর্কে অবগত নন বলেও জানা গেছে।
রংপুরে করোনা প্রতিরোধে গঠিত নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু ঢাকা পোস্টকে বলেন, সবাই নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হলে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকবে। আমরা সচেতনতা সৃষ্টিতে চেষ্টা করছি। কিন্তু সাধারণ মানুষ উদাসীন ও অসচেতন। এজন্য জনগণকে বিধিনিষেধ মানাতে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। তা না হলে অতীতের মতো পরিণতি হবে।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, করোনার বিস্তার রোধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণের হার অনেকাংশে কমে যাবে।
এ সময় তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে নতুন আরও ৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১১ শতাংশে। এই সময়ে কোনো রোগী মারা যায়নি।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসপি