অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে দেশে নতুন আইনের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের।

তিনি বলেছেন, সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তবে সেটি হতে হবে আইনের বিধান সাপেক্ষে। কিন্তু সেই আইনটি এখন পর্যন্ত করা হয়নি। আমরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে নতুন আইন করার গুরুত্ব তুলে ধরেছি। আমরা চাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন এবং অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইনটি হোক।

মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে রংপুর সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি সেখানে পৌঁছলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা তাকে শুভেচ্ছা জানান।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, বিভিন্ন সময় অনেকেই তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করেছেন। আমরা সংলাপে রাষ্ট্রপতিকে নতুন আইনের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন এ ধরণের সরকার ব্যবস্থা করার ব্যাপারেও মতামত জানিয়েছি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাহী বিভাগকে কাজে লাগাতে পারছে না। অথচ সংবিধানের ১২৬ ধারা অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগ নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে। কিন্তু বাস্তবে চিত্র উল্টো। নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিলেও নির্বাহী বিভাগ তা পালন করছেন না।    

নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ যুক্তিসঙ্গত হয়েছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তবে সংবিধানের ৪৮ ধারা অনুচ্ছেদের ৩ উপধারা মোতাবেক দুটি কাজ ছাড়া সমস্ত কাজের জন্য রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ মোতাবেক করার বিধান রয়েছে। এই কারণে যদি নতুন কোনো আইন না হয়, তাহলে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আর এটা হলে কারো কাছেই সেই নির্বাচন কমিশন গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। শুধু তাই নয় নির্বাচনও গ্রহণযোগ্য হবার সম্ভাবনা অনেক কম থাকবে। এ কারণেই আমরা নতুন আইন করে নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনকালীন ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করেছি।  

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকার ও সরকারি দল যদি মনে করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি বড় অপরাধ করেছে, তাহলে ভবিষ্যতে এই বিষয়টি নিয়েও আমাদের চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। এ সময় জাতীয় পার্টি ৩১ বছর ক্ষমতার বাহিরে থাকলেও এখনো অনেক শক্তিশালী রয়েছে।

জিএম কাদের বলেন, শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নয়, সবদিক থেকে আমরা খারাপ সময় পার করছি। বেকার সমস্যা একটা চরম পর্যায়ে চলে গেছে। এখনো দেশের কোটি কোটি মানুষ বেকার। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ছেলেরা ফুটপাতে বসে হকারি করছে। তারা স্কুটার চালায়, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালায়। পাঠাও বা উবার চালিয়ে তারা জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছে। বেকার সমস্যা এমন একটা পর্যায়ে গেছে যে, মানুষ তাদের ভিটেমাটি বিক্রি করে ছেলেদের বিদেশে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কারণ ছাড়াই জিনিসপত্রের দামের ঊর্ধ্বগতির কোনো সীমা নেই। সব কিছুর দাম বাড়ানো হচ্ছে। মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। তেলের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। এখন সবকিছুই অনিরাপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। ঘর থেকে বের হলে দুর্ঘটনা ঘটছে। মানুষের ইজ্জতের কোনো মূল্য নেই। বেকার সমস্যার কারণে মাদক কারবারি বাড়ছে। কোটি কোটি মানুষ মাদকের দিকে চলে যাচ্ছে। এটা আগামী প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

এর আগে বিমানযোগে ঢাকা থেকে সৈয়দপুরে আসেন জিএম কাদের। পরে সড়ক পথে রংপুর সার্কিট হাউজে পৌঁছলে রংপুর জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। সেখান থেকে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দর্শনায় পল্লীনিবাসে গিয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসীর, জেলা সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, সহ-সভাপতি আজমল হোসেন লেবু, মহানগরের যুগ্ম সম্পাদক লোকমান হোসেন, হাসানুজ্জামান নাজিমসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

চারদিনের সফরে রংপুর ও লালমনিরহাটে পৌঁছে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবেন। সার্কিট হাউজে রাত্রিযাপন করে বুধবার সকালে তার নির্বাচনী এলাকা লালমনিরহাটে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য রওনা হবেন। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরআই