উত্তরবঙ্গের শস্যভান্ডার খ্যাত দিনাজপুরে চালের বাজারে সুখবর নেই। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। ধান-চালের ভরা মৌসুমে দাম বৃদ্ধিকে সিন্ডিকেটের কারসাজি বলছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা। তবে মিল মালিকরা বলছেন, ধানের দাম বেশি হওয়ায় চালের দামও বেড়েছে।

সরেজমিনে দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। 

দিনাজপুরের বাহাদুর বাজারে আটাশ চাল প্রতি বস্তা ২ হাজার ৫৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৬৫০ টাকা, উনত্রিশ চাল ২ হাজার ৪০০ টাকা বস্তা, মিনিকেট ২ হাজার ৯০০ থেকে ৩ হাজার টাকা বস্তা, কাটারি চাল ৪ হাজার ৪০০ টাকা বস্তা এবং চিনিগুড়া ৪ হাজার ২৫০ টাকা বস্তা বিক্রি করা হচ্ছে।

ব্যবসায়ী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খোলা বাজারে ওএমএসের চাল সরবরাহ বন্ধ থাকা, ভারত থেকে আমদানি করা চাল নিম্নমানের হওয়া, চলতি মৌসুমে আমন ধানের দাম বেশি হওয়াসহ বোরো মৌসুমের কোনো ধান কৃষকের হাতে না থাকায় মিল মালিক ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে চালের দাম বাড়ছে।

বাহাদুর বাজার খাদ্য ভান্ডারের সত্বাধিকারী মো. আলাল উদ্দীন ব্যাপারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজি প্রতি চালের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ টাকা। সাধারণত বোরো ধান দিয়েই সারা বছরের চালের যোগান হয়ে থাকে। কিন্তু মৌসুমে বোরো ধানের দাম অনেক কম থাকলেও চালের দাম বেড়ে গেছে। প্রতি বছর চালের দাম এসময় বেড়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা যে দামে কিনি সামান্য লাভ রেখে বিক্রি করি।

রামনগর হাজীর মোড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শরিফুল স্টোরের মালিক শরিফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারে হঠাৎ করেই চালের দাম বেড়ে গেছে। মোটা চালের দাম কম বাড়লেও সরু চালের দামটা বেড়েছে বেশি।

দিনাজপুর কৃষি বিপণন বিভাগের জেলা মার্কেটিং অফিসার হুমায়ুন কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারে ধানের চাহিদা অনুসারে যোগান কম। বোরো মৌসুমের কোনো ধান এখন আর কৃষকের হাতে নেই। যেটুকু আছে সবটুকুই চলে গেছে মিল মালিক আর বড় ব্যবসায়ীদের হাতে। তারা বাজার বুঝে ছাড়ছে। পাশাপাশি ওএমএসের মাধ্যমে চাল সরবরাহ বন্ধ ও আমদানি করা চাল নিম্নমানের হওয়ায় দাম বাড়ছে।

তবে মিল মালিকরা বলছেন, ভরা মৌসুমে ধানের দাম বাড়ার কারণ তাদের বোধগম্য নয়। ধানের দাম অস্বাভাবিক হারে কেন বাড়ছে তা তারা বুঝতে পারছেন না। দাম বেশি থাকায় মিল মালিকরা মিল চালাতে বাধ্য হয়ে বেশি দামে ধান কিনছে। পাশাপাশি চাল উৎপাদনের খরচ, কর্মচারীদের বেতন, ব্যাংকের সুদ সবকিছুই হিসাবে রাখতে হয়। সব মিলে চালের দাম বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ চালকল মালিক গ্রুপের সহসভাপতি শিল্পপতি শহিদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাজারে বর্তমানে ধানের সরবরাহ কম। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে মালিকদের। উৎপাদন খরচ, আনুষঙ্গিক ব্যয় ও ব্যাংক হিসাব সব মিলে মালিকরা লোকসানে রয়েছে। কিন্তু মিল না চালালে লোকসান আরও বাড়বে। তাই তারা লোকসান কমাতে বাধ্য হয়ে মিল চালাচ্ছেন। 

ইমরান আলী সোহাগ/এসপি