সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি ও তার ছেলে দাবি করা মোহাম্মদ ইসহাক

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদিকে জন্মদাতা পিতা দাবি করা মোহাম্মদ ইসহাকের (২৭) মা সুফিয়া খাতুন (৫৫) দাবি করেছেন- ইসহাক গর্ভে থাকা অবস্থায় ছয় মাসের মধ্যে তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন বদি। পরে টেকনাফ থেকে চলে যাওয়ার শর্তে বেঁচে যায় ইসহাক। দীর্ঘ ২৭ বছর পর ইসহাক পিতার স্বীকৃতি দাবি করেছে। 

ইসহাকের মা সুফিয়া খাতুন বলেন, টেকনাফের ধুমপাড়া এলাকায় আমরা সপরিবারে বসবাস করতাম। একদিন ডাকাতরা আমাদের বাড়ির সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায়। তখন আবদুর রহমান বদির বাবা এজাহার মিয়া কোম্পানীর কাছে গেলে তিনি সপরিবারে তার বাড়িতে চলে আসতে বলেন। সে সুবাধে বদির সঙ্গে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে মাওলানা আব্দুস সালামের মাধ্যমে আমরা বিয়ে করি। এরপর বেশ কিছুদিন স্ত্রীর মর্যাদা দিলেও যখন ইসহাক গর্ভে তখন তাকে নষ্ট করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন বদি। বদির বাবা এজাহার মিয়ার কাছে বিচার দিলে তিনি অলিয়াবাদ এলাকায় তাদের একটি নির্মাণাধীন বাড়িতে কাজ করা শ্রমিকের সঙ্গে আমার বিয়ে পড়িয়ে দেন। হুমকির কারণে ইচ্ছে না থাকা সত্বেও শ্রমিককে বিয়ে করি। তারপর টেকনাফের কোনো এলাকায় আমাদের থাকতে দেননি বদি। 

সুফিয়া খাতুন আরও বলেন, ইসহাকের জন্মের পর আবার বদির বাড়িতে যাই। একাধিক বার তার কাছে গেলেও আমাদের টেকনাফে আর থাকতে দেননি। একপর্যায়ে ছেলের পড়ালেখার অনুমতি দেন বদি। প্রথমে টেকনাফের একটি কলেজে ভর্তি করেন ইসহাককে। সেখান থেকে কক্সবাজার কলেজে ভর্তি করেন। পরে নানাভাবে ইসহাককে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোবাইলে আমাকে ফোন করতে বারণ করেন বদি।

গত ১৩ ডিসেম্বর মোহাম্মদ ইসহাক সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদিকে বাবা দাবি করে টেকনাফের সহকারী জজ মো. জিয়াউল হকের আদালতে দাখিল করা তার আবেদনে প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষার আর্জিও জানান।

বাদীপক্ষের আইনজীবী নেজাম উদ্দিন ঢাকাপোস্টকে বলেন, বিজ্ঞ বিচারক ইসহাকের আবেদনটি আমলে নিয়ে আগামী ১৪ জানুয়ারি বিবাদীকে আদালতে হাজির হয়ে জবানবন্দি দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে বিবাদী যদি বাদীর দাবি অস্বীকার করেন, তখনই বদি ও ইসহাকের ডিএনএ পরীক্ষার প্রশ্ন আদালতের বিষয় হিসেবে দাঁড়াবে। 

মামলায় বাদী মোহাম্মদ ইসহাক এজাহারে তার বাবার নাম লিখেছেন আবদুর রহমান বদি। তাকে কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইসহাক তার এজাহারে বলেছেন, বদিদের এক সময়ের পারিবারিক মিস্ত্রী মোহাম্মদ ইসলামের সংসারে তিনি লালিত-পালিত হয়েছেন। মোহাম্মদ ইসলামের সঙ্গে বাদীর মা সুফিয়া খাতুনের ‘দ্বিতীয়’ বিয়ে হয়। বর্তমানে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের বিসিক শিল্প এলাকা সংলগ্ন দক্ষিণ মুহুরী পাড়ায় বসবাস করার কথা আর্জিতে জানিয়েছেন ইসহাক।

বিবাদী আবদুর রহমান বদি টেকনাফ পৌর এলাকার চৌধুরীপাড়ার এজাহার মিয়া ওরফে এজাহার কোম্পানির ছেলে। তিনি উখিয়া-টেকনাফ আসনের দুই বারের সংসদ সদস্য ছিলেন। একই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আকতার চৌধুরী তার স্ত্রী।

মামলায় দুই নম্বর মূল বিবাদী করা হয়েছে বদির চাচা পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলামকে। মূলত জন্ম সনদে বদির নামের পরিবর্তে মোহাম্মদ ইসলামের নাম বসানোর কারণে তাকে মূলত বিবাদী করা হয়।

মোহাম্মদ ইসহাক ঢাকাপোস্টকে বলেন, শুধুমাত্র নিজের পিতার স্বীকৃতিটাই দাবি করছি। আমার পিতার (বদি) কোনো ধরনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের লোভ এবং তার সম্মানহানি করার কোনো উদ্দেশ্যে আদালতের দ্বারস্থ হইনি। 

মামলায় বদিকে বাবা বলে দাবি করলেও মোহাম্মদ ইসহাকের জন্ম নিবন্ধন সনদে কেন বাবার নাম লেখা হয়েছে ‘মোহাম্মদ ইসলাম’ এমন প্রশ্নের উত্তরে ইসহাক বলেন, জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তিনি ২০১১ সালের ৮ জুন টেকনাফ পৌরসভায় যোগাযোগ করেন। পিতার ঘরে তিনি ‘আবদুর রহমান বদি’ উল্লেখ করেন। কিন্তু পৌর মেয়র হাজী মোহাম্মদ ইসলাম বদির আপন চাচা হওয়ায় তার নির্দেশে সনদে মোহাম্মদ ইসলামের (সুফিয়ার স্বামী) নামই লেখা হয় বলে ইসহাকের দাবি।

এ বিষয়ে সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি বলেন, কেউ মামলা করে থাকলে আগে আদালতের নথিপত্র দেখে তারপর কথা বলবো। 

আরএআর