যৌন নির্যাতন করে ভিডিও ধারণ, লজ্জায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে এক স্কুলছাত্রীকে (১৪) স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে ধরে নিয়ে যৌন নির্যাতন এবং ভিডিও চিত্র ধারণের অভিযোগ উঠেছে একই এলাকার প্রভাবশালী পরিবারের তিন যুবকের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর লোকলজ্জার ভয়ে ওই স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে ফুঁসে ওঠেছে এলাকাবাসী ও স্কুলছাত্রীর সহপাঠীরা।
গত শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের আনন্দ কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে ওই স্কুলছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করে ভিডিও চিত্র ধারণ করে তিন যুবক। পরে দুপুর ২টার দিকে নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করে ওই স্কুলছাত্রী।
বিজ্ঞাপন
কটিয়াদী মডেল থানায় দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই ছাত্রী এবার বনগ্রাম আনন্দ কিশোর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে অষ্টম শ্রেণি পাস করেছে। নবম শ্রেণিতে ভর্তির ফরম আনতে গত শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে স্কুলে যায় সে। এ সময় স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় বনগ্রাম গ্রামের মলাই মিয়ার ছেলে আকাশ মিয়া (২৫), ছিদ্দু মিয়ার ছেলে আরমান মিয়া (১৯) ও পার্শ্ববর্তী নন্দীপুর গ্রামের বকুল মিয়ার ছেলে ইমন মিয়া (২০)। তারা ওই স্কুলছাত্রীকে স্কুলের সীমানা প্রাচীরের আড়ালে নিয়ে যায়। সেখানে একে একে তিনজন তাকে যৌন নির্যাতন করে এবং নির্যাতনের সময় মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে।
ওই স্কুলছাত্রী চিৎকার করে একপর্যায়ে তিন যুবকের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে স্কুলের শিক্ষক, স্থানীয় চেয়ারম্যান, বাজারের লোকজন এবং এলাকাবাসীকে এ ঘটনা জানিয়ে বিচায় পায়নি। এমন পরিস্থিতিতে মোবাইল ফোনে মায়ের কাছে যৌন নির্যাতন ও ভিডিও চিত্র ধারণের কথা জানায় সে। তার মা এসে স্কুল থেকে তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। পরে দুপুর ২টার দিকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ওই স্কুলছাত্রী।
এদিকে রোববার (২৬ ডিসেম্বর) ওই এলাকায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন থাকায় ঘটনাটি কেউ জানতে পারেনি। নির্বাচনের পর সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী ওই স্কুলছাত্রী হত্যার বিচার ও যৌন নির্যাতনকারীদের গ্রেফতারের দাতিতে বিক্ষোভ করেন।
এ ঘটনায় ওই স্কুলছাত্রীর মা তিন যুবক আকাশ, আরমান ও ইমনকে আসামি করে কটিয়াদী মডেল থানায় মামলা করেছেন।
ওই স্কুলছাত্রীর মা ঢাকা পোস্টকে বলেন, শনিবার আমার মেয়ে স্কুলে যায় নবম শ্রেণির ভর্তি ফরম আনতে। তখন ওই তিন বখাটে আমার মেয়ের সঙ্গে খারাপ কাজ করেলে সে সবার কাছে বিচায় চেয়ে না পেয়ে লজ্জায় আত্মহত্যা করে। আমি গতকাল সোমবার মামলা করেছি এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
কটিয়াদী মডেল থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, ওই স্কুলছাত্রীর মা বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে
মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জান ডা. মো. মুজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ওই স্কুলছাত্রীর ভেজাইনাল সোয়াব পরীক্ষা ও ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ আমার নিশ্চিত করতে পারব।
এসকে রাসেল/আরএআর