পাবনায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, যুবদল নেতা ছুরিকাহত
পাবনায় খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত সমাবেশ বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পণ্ড হয়েছে। সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীরা হাতাহাতি, বাঁশ, লাঠি ও চেয়ার নিয়ে একে অপরের ওপর হামলায় জড়িয়ে পড়েন। এ সময় সাবেক জেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মনির আহমেদকে ছুরিকাঘাত করে দলের প্রতিপক্ষের লোকজন।
সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে শহরের গোপালপুর এলাকার জেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, ছুরিকাঘাতের পরপরই সংঘর্ষে জড়ায় দুই গ্রুপ। সংঘর্ষে সমাবেশ পণ্ড হয়ে গেলে নেতাকর্মীরা বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছোটাছুটি করতে থাকেন। এ সময় বীণাবানী হলের সামনে থাকা পুলিশ ও ডিবি এসে বিএনপির কার্যালয়স্থ সমাবেশের সম্মুখে অবস্থান নেয়। দ্রুত নিজেদের বলয়ের নেতাকর্মীদের ব্যারিকেডে সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে সমাবেশ শুরু হয় সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেল ৩টায়। এ সময় বক্তব্য রাখছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিকেল পাঁচটার দিকে যুগ্ম মহাসচিব হারুন উর রশীদ হারুনের বক্তব্য চলাকালে যুবদল নেতা তসলিম হাসান সুইট ও মনির আহমেদের গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতির শুরু হয়। একপর্যায়ে মনিরকে ছুরিকাঘাত করলে সমাবেশস্থলে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় মনিরকে গুরুতর আহত অবস্থায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়।
এদিকে সকাল থেকে সমাবেশস্থলে যোগ দিতে জেলা যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন মঞ্চের সম্মুখে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও ওয়ার্ড থেকে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে থাকেন। সল্প সময়ের মধ্যে সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। বেলা দুইটা থেকে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হলেও কেন্দ্রীয় নেতারা বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় বক্তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারপ্রধানের উদ্দেশে নানা ধরনের কথা বলেন।
পাবনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম ঘটনার বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনুমতি নিয়ে পাবনা জেলা বিএনপি তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করছিল। আমাদের পুলিশ সদস্যরা সমাবেশের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বরত ছিলেন। সমাবেশস্থলে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে একজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এ ঘটনায় এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ কেউ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের সভাপতিত্বে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশিদ এমপি, কেন্দ্রীয় বিএনপির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট শিমুল বিশ্বাস, সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহীন শওকত, সহসাংগঠনিক ওবায়দুর রহমান চন্দনসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন জেলা যুবদলের সদস্যসচিব সিদ্দিকুর রহমান, জেলা বিএনপির নেতা আনিসুর রহমান ও নূর মোহম্মদ মাসুম বগা।
সংঘর্ষের বিষয়ে পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ ঘটনার জন্য সমাবেশের কোনো ক্ষতি হয়নি। তাদের মধ্যে ব্যক্তিগত কারণে সমাবেশস্থলে ঝামেলা হয়েছে। এটি দলের কোনো গ্রুপিং নয়। আমরা সবাই খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন করছি। দলের মধ্যে যারা বিভেদ সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাকিব হাসনাত/এনএ