বিএনপির জন্যই আমার জন্ম হয়েছে : মঞ্জু
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) পদ থেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শনিবার (২৫ ডিসেম্বর) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকের (খুলনা বিভাগ) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, এ অব্যাহতি তার প্রতি অবিচার।
বিজ্ঞাপন
সাবেক এ সংসদ সদস্য বলেন, আজ অব্যাহতির নোটিশ পেয়েছি। এভাবে অব্যাহতি দিয়ে আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমি মনে করি, ৪৪ বছরের যে রাজনীতি আমি করেছি, শহিদ জিয়ার সততা, নিষ্ঠা এবং দেশপ্রেমের প্রতীক বিএনপির রাজনীতি করেছি। সেই দলের দুর্বৃত্তায়ন রোধে, দুর্নীতিবাজদের রুখতে আমি স্পষ্টভাবে সত্য কথা বলতে সবসময় চেষ্টা করেছি। সমাজের ঘৃণিত ব্যক্তিদের নিয়ে দল গঠন এবং সমাজ বিরোধীদের দলের নেতৃত্ব দেওয়ার অশুভ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আমি সত্য কথা বলেছি।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করে বা কটাক্ষ করে কোনো বক্তব্য রাখেননি দাবি করে মঞ্জু বলেন, আমি যেটা করেছি, বিএনপির ভালোর জন্য করেছি। আগামীতে বিএনপি একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হোক, পুনঃগঠন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হোক। সিন্ডিকেটের হাত থেকে বিএনপিকে রক্ষা করা এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা বিএনপিকে তাদের নিজেদের তল্পীবাহক বানাতে চায় এবং অসৎ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সুবিধাভোগী এই শ্রেণির বিরুদ্ধে আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ২৯ পাতার একটি ফাইল জমা দিয়েছিলাম।
আবেদনপত্রটি তদন্ত হবে, আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগ দেওয়া হবে। কিন্তু কোনো কিছু না করেই আমার ওপর কঠিন শাস্তি আরোপ করা হয়েছে। তাতেও আমার কোনো দুঃখ নেই। সত্য কথা আমি নিজের জন্য বলিনি, দলের ভালোর জন্য বলেছি। শহিদ জিয়ার দলের আগামী রাজনীতি যাতে আরো ভালো হয়, স্বচ্ছ হয়, সুসংগঠিত হয় সেই কথাগুলো আমি বলার চেষ্টা করেছি। আমার ৪৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে এ দলের পেছনে সর্বোচ্চ সময় ব্যয় করেছি।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে নিয়োজিত দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের নিয়ে দল গঠন ছিল আমাদের স্বপ্ন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে সেই কথাগুলোই বলেছি। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, কতোগুলো সুবিধাবাদী লোক, একটি সিন্ডিকেট তাদের পক্ষে দলের কর্তৃত্ব নেওয়ার জন্য তারা এ দূষণ প্রক্রিয়া চালু করেছে। আমি এর নিন্দা জানিয়েছি, বিচার দাবি করেছি, তদন্ত দাবি করেছি। আমি আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় আমাকে ডাকার জন্য আহ্বান করেছি। কোনো কিছুই না করে আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আমি মনে করি, এটি আমার প্রতি অবিচার করা হয়েছে। আমি আশা করব ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের ভালোর জন্য এবং তার ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখার জন্য, সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর হাত থেকে দলকে রক্ষার জন্য, সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। তাহলেই আমি ন্যায় বিচার পাব।
নিজেকে প্রোডাক্ট অব বিএনপি আখ্যায়িত করে মঞ্জু বলেন, বিএনপির জন্যই আমার জন্ম হয়েছে। বিএনপিই আমার প্রথম, বিএনপিই আমার শেষ। আশা করব আমার দল ভুল বুঝতে পারবে। আমরা যারা সঠিক ধারায় রাজনীতি করি এবং বিএনপিকে দেখি, সারা বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা আমাদের পক্ষে আছে। অনেক কেন্দ্রীয় নেতা আমাদের পক্ষে, আমাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা কষ্ট পেয়েছেন, বলেছেন তুমি সত্য কথা বলেছ। আমাদের এ স্পষ্ট বক্তব্যের পক্ষে সকলেরই অবস্থান। কিন্তু কেউ সাহস করে কথা বলতে পারছেন না। আমি সাহস করে কথা বলেছি। আমি আশা করব দল সঠিক জায়গায় সঠিক নেতৃত্বে চলবে এবং ভালো মানুষের দল গঠন করবে। এ সিন্ডিকেট পরাভূত হবে। বিএনপি শহিদ জিয়ার সততা ও দেশপ্রেম নিয়ে সঠিক ধারায় চালিত হবে।
তিনি বলেন, খুলনায় আমি ভয়-ভীতিকে উপেক্ষা করে সাহসিকতার সঙ্গে রাজপথে কর্মীদের নিয়ে অবস্থান করেছি। আমাদের নেত্রী জেলখানায়, তাকে মুক্ত করা দরকার। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে দেশে আনা দরকার। দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন করা দরকার। এ বিষয়গুলোকে সামনে নিয়েই বিএনপি একটি ভালো মানুষের দল গঠন করবে এবং শক্ত সামর্থ্য বিএনপি গঠিত হবে- এ আশা ছিল আমার। আমি এখনো সেই আশায় আছি। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সঠিকভাবে খুলনার বিষয়টিকে দেখবেন। তাহলেই আমরা ন্যায় বিচার পাব।
মোহাম্মদ মিলন/এমএএস