কয়েক মাস আগে বেসরকারি একটি কোম্পানিতে মোটামুটি বেতনে চাকরি পান আব্দুল হক। সিদ্ধান্ত নেন বরগুনা থেকে স্ত্রীকে ঢাকা নিয়ে আসবেন। ঢাকায় বাসাও নিয়েছিলেন স্ত্রীর জন্য। কিন্তু এমভি অভিযান-১০ ট্র্যাজেডিতে নিখোঁজ হন তিনি। তার সন্ধানে ঝালকাঠি এসেছেন বরগুনা জেলার আমতলীর বাসিন্দা খোকন। খোকন নিখোঁজ আব্দুল হকের স্ত্রীর বড় ভাই।

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) ঝালকাঠি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে কথা হয় খোকনের সঙ্গে। তিনি বলেন, অনেক কষ্টের পরে আমার বোনের একটা কূল-কিনারা হয়েছিল। বোনের জামাই অনেক কষ্ট করেছে। কিন্তু সুখ সইল না কপালে।

লঞ্চে আগুনের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই আব্দুল হকের মোবাইলে হাজার বার কল করেছি। মোবাইল বন্ধ। তবে বৃহস্পতিবার লঞ্চে ওঠার পরে বোনকে কল করে হক বলেছিল, সব গুছাইয়া রাইখো, জলদি ঢাকা ফিরতে হবে। আমি কিন্তু বাড়ি বেশি দিন থাকমু না। সেই কলই যে শেষ কল হবে কে জানত?

খোকন বলেন, এখন এসে লাশটিও পাচ্ছি না। আমি আমার বোনকে কি দিয়ে বুঝ দেব? অন্তত লাশটি নিয়ে গিয়ে হলেও বলতে পারব, আল্লাহ নিয়ে গেছেন। এখন কী বলব? কবর দেওয়ারও তো কোনো সুযোগ রইল না। যদিও খোকনের বিশ্বাস, নদীতে ডুবে মারা যেতে পারে আব্দুল হক। এজন্য ট্রলারে করে শুক্রবার সুগন্ধা নদীতে সন্ধান চালিয়েছেন। আজও সন্ধানে নেমেছেন।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৭ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার লঞ্চটি ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশে সদরঘাট ছেড়ে এসে রাত ৩টার দিকে ঝািলকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীতে পৌঁছালে ইঞ্জিনরুমে বিকট শব্দে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। নিহতদের মধ্যে ৩৭ জনের লাশ বরগুনায় পাঠানো হয়েছে। তবে শনাক্ত না হওয়ায় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা এখনই সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এসপি