আমাকে লক্ষ্য করে ৩০ মিনিট গুলি ছোড়ে পাকিস্তানি বাহিনী
‘২৫ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন যখন ইয়াহিয়া খান স্থগিত ঘোষণা করলেন, সঙ্গে সঙ্গেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমরা রাজপথে নেমে পড়ি। কারও আহ্বানে নয়, কারও নির্দেশে নয়, সাধারণ জনগণ রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিল মিছিলের পর মিছিলে। বাঁশের লাঠি, রড, হকিস্টিক নিয়ে আমরাও মিছিল শুরু করলাম। মনে হলো পরাধীনতার শিকল ছিঁড়তে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় এসেছে। চারদিকে যুদ্ধের বাতাস। আর ঘরে থাকতে পারছি না। মনে হচ্ছিল এখনই ঝাঁপিয়ে পড়ি।’
মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ঢাকা পোস্টকে এসব কথা বলছিলেন অন্তত ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধার প্রশিক্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হামিদ রঞ্জু। তিনি সাভারের মৃত খন্দকার আব্দুল মজিদের ছেলে।
বিজ্ঞাপন
যুদ্ধে যাওয়ার জন্য আমি সেদিন মা-বাবার কাছ থেকে বিদায় নিতে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থেকে সাভারে আসি। বাবা-মার সঙ্গে দেখা করব। ভাই-বোন সবার সঙ্গে বসে খাব। আমার সঙ্গে হয়তো পরিবারের আর নাও দেখা হতে পারে। এজন্য আমি সিংগাইর থেকে বাড়িতে আসি।
কিন্তু বাবা খুবই ভয় পেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘তুই এখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে যা। তোর জন্য কিন্তু আমরা সবাই মরে যাব।’ আমি বললাম, দুপুরের ভাত খেয়ে যাই। দুপুরের রান্না হলো। পরিবারের সবাই একসঙ্গে খেলাম। খাওয়ার সময় বাবা-মার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম যে তোমাদের সঙ্গে হয়তো আমার আর দেখা হবে না। ভাত খাওয়ার পরই বাবা তাগিদ দিল তুই তাড়াতাড়ি চলে যা। পরে সিংগাইরের রায়দক্ষিণে আবার চলে গেলাম। এরপর মুক্তিযুদ্ধে গেলাম।
যুদ্ধে যাওয়ার অনুপ্রেরণা
বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হামিদ রঞ্জু বলেন, যুদ্ধটা ছিল গণযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের আগে আমার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। যেটার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন সিরাজুল আলম খান, আ স ম আব্দুর রব, শাজাহান সিরাজ, আব্দুল কুদ্দুস মাখন ও নুরে আলম সিদ্দিকী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ যেখানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। সেখানে ক্ষমতা দেবে না এটা হতে পারে না। ছাত্রলীগের তখন এক দফা ছিল স্বাধীনতা। তখনও কিন্তু আওয়ামী লীগের স্বাধিকার আন্দোলনই ছিল প্রকট। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণে আমরা ভেবেছিলাম সেদিনই বোধ হয় স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন। তিনি সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন না।
তবে প্রকারন্তে তিনি সেদিন যে ভাষণ দিলেন, সেই ভাষণেই আমরা সম্মোহিত হয়ে গেলাম। স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও তিনি কিন্তু ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো’ ঘোষণা দিয়েছিলেন। আমরা দারুণভাবে অনুপ্রাণিত হলাম। আমরা অবশ্যই স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করব। এটাই আমার অনুপ্রেরণা ছিল।
কোথায় কার অধীনে ট্রেনিং
আমরা আগরতলায় যাই। এরপর কলকাতায় যাই। সেখানে হোসেন আলীর অফিসে পার্ক সার্কাস অ্যাভিনিউ বাঙালি অ্যাম্বাসেডর স্বাধীনতার পক্ষে যোগ দিয়েছিল। সেখানে যোগাযোগ করি ট্রেইনিংয়ে যাওয়ার জন্য। সেখান থেকে যেতে পারি না। পরে প্রিন্স অব স্ট্রিটে কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। সেখান থেকেও যেতে পারি না। শেষে নুরে আলম সিদ্দিকী শ্রীনিকেতন হোটেল থেকে আমাদের পাঠিয়ে দিল রানাঘাট নামের একটা ক্যাম্পে।
সেখানে তার মামা শাহ্ মজিদ অথবা আব্দুল মজিদ হবে, তার আন্ডারে ক্যাম্পটা ছিল। নানা অনিয়মের কারণে সেখান থেকেও চলে আসলাম। শেষে দেখা হলো শাজাহান সিরাজের সঙ্গে। প্রিন্স অব স্ট্রিটের তিনতলায় কামরুজ্জামানের অফিস ছিল। সেখানে সিঁড়িতে তার সঙ্গে দেখা হয়। শাজাহান ভাইকে বললাম, ‘ভাই আমরা তো এই অবস্থায় আছি।’ তিনি বললেন, তোরা এখানে আসছিস কেন? তোরা আগরতলায় যা আমি তোদের পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আমরা কলকাতাকে সালাম জানিয়ে আবার আগরতলায় আসলাম। আগরতলায় এসে আ স ম আব্দুর রব ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলো। তিনি বললেন, আমি কাল সকালবেলা পাঠিয়ে দেব। তুমি একা চলে যাবা। তাকে বললাম আমার সঙ্গে আরও দুইজন আছে। তিনি বললেন, এখানে ছাত্রলীগ ছাড়া কেউ যেতে পারবেন না। আমার সঙ্গে দুইজন ছিলেন। তারা হলেন মোজাম্মেল, সে করতো ছাত্র ইউনিয়ন আর কাইয়ুম করতো আতাউর রহমানের বাংলা ছাত্রলীগ। আমি রব ভাইকে মিথ্যা কথা বললাম যে ভাই তারাও ছাত্রলীগ। আমি একা যাব এ কারণে মিথ্যা বললাম। তিনি বললেন, ঠিক আছে আমি জিপ পাঠিয়ে দেব তোরা চলে আসিস।
পর দিন জিপ পাঠিয়ে দিয়েছেন, আমরা আগরতলা বিমানবন্দরে গেলাম। প্রথম ফ্লাইটটা আমাদের সামনেই নামল। দেখি ভেতর থেকে বেরিয়ে আসলেন মোস্তফা মহসিন মন্টু, খসরু ভাই, আগে থেকেই তাদের চিনতাম। মন্টু ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় গেছেন? তিনি বলেন, গিয়ে দেখতে পারবি। কেমন জায়গা জিজ্ঞেস করলাম? বললেন, অপূর্ব জায়গা। ভালো জায়গার কথা শুনে অণুপ্রাণিত হলাম। আমরা দেরাদুনে গেলাম। আমি ট্রেইনিং করেছি দেরাদুন মিলিটারি একাডেমির তান্দুয়াতে। প্রশিক্ষণ নিয়েছি মেজর অপিমাল হোতরা, মেজর একে ছামিয়াল, মেজর খিসামিসরোসহ অনেকের কাছে। তাদের অধীনে আমরা ২ মাস প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি।
ট্রেনিং শেষে গড়ে তুলি মুক্তিবাহিনী
প্রশিক্ষণ শেষে আমরা আগরতলায় আসলাম। আগরতলায় এসে অস্ত্রসংকটে পড়ে গেলাম। যে অস্ত্রগুলো ছিল সেগুলো খুবই নিম্নমানের। আর্মগুলো ইন্ডিয়ান ছিল, কয়েক রাউন্ড ফায়ার করলে বিস্ফোরণ ঘটতো। বিস্ফোরণ হলে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারাও অনেকে মারা যেতো। তাই আমরা বললাম ইন্ডিয়ান আর্মস নেব না; আমরা রাশিয়ান আর্মস নেব। শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। তিনি বললেন, একটা এলএমজিও যদি থাকে, সেটা পাবে সাভার।
রাইফেল, স্টেনগান, এসএলআর, গ্রেনেড, এক্সপ্লোসিভসহ বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে আগরতলার মাজারঘাট ক্যাম্প থেকে আমরা রওনা করি। বর্ডারে আমাদের পৌঁছে দেয় সিরোজ সিং নামের একজন মেজর। তিনি আমাদের স্যালুট করে বিদায় জানান। এ সময় তিনি দুটি পাসওয়ার্ড শিখে দেন। একটি ইন্ডিয়ান আর্মি ধরলে ব্যবহার করতে হবে অন্যটি মুক্তিযোদ্ধার সামনে পড়লে ব্যবহার করতে হবে।
সামান্য দূরেই একটা নদীর মোহনা কিংবা বাঁকে আমাদের একটি দল অনেকগুলো নৌকা ঘেরাও করে ফেলল এবং আমাদের আত্মসমর্পণ করতে বলল। আমরা তো আত্মসমর্পণ করব না। তখন আমরা পাসওয়ার্ড দিলাম ‘র’ ভারতীয় আর্মির পাসওয়ার্ড কিন্তু তারা ভারতীয় আর্মি ছিল না। আবার পাসওয়ার্ড দিলাম ‘ফুল’ মুক্তিযোদ্ধাদের পাওয়ার্ড। তারাও বলল যে ‘ফুল। আমি বললাম, তোমরাও দেশ স্বাধীন করবা আমরাও করব। তাহলে আত্মসমর্পণ করব কেন?’ তারা বললেন, হাইকমান্ডের নির্দেশ।
আমরা আত্মসমর্পণ না করে তাদের হাইকমান্ড ও আমাদের হাইকমান্ডকে খবর দেই। তারা এসে আমাদের ছেড়ে দেন। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুলতাননগর বলে একটা জায়গায় ব্রিজের নিচে রাজাকার ছিল তাদের টাকা দিয়ে আমরা পার হলাম। সেখান থেকে পার হয়ে নৌকায় আসলাম চারগাছ। এরপর নরসিংদীতে এসে পৌঁছাই। এভাবেই আমরা আস্তে আস্তে সাভারে আসি।
তখন কাশিমপুরটা সাভারে ছিল। বর্তমান গাজীপুর মহানগরের ভেতরে। সেখানকার জেলেদের ডেকে উঠিয়ে তাদের নৌকা দিয়ে কাশিমপুর পাড়ি দেই। আমি দেশে ফিরে একটা বিশাল বাহিনী তৈরি করি। কারণ আমি মরে গেলে তো আর যুদ্ধ করতে পারব না। তাই যোদ্ধার সংখ্যা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দিয়ে বাহিনী তৈরি করলাম। আমি প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রায় ৪৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈরি করি।
যুদ্ধের লোমহর্ষক স্মৃতিচারণ
একদিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনজন রাজাকার আত্মসমর্পণ করবেন তিনটি রাইফেল ও সাড়ে ৪০০ রাউন্ড গুলি নিয়ে। সেখানে যাওয়ার পথে চাপাইন বলে একটা জায়গা আছে। সেখানে এক রাজাকার অথবা দালাল আমাকে দেখে ফেলে। আমার হাতে আর্মস ছিল। সাথে সাথে তারা রেডিও কলোনি এলাকায় অবস্থান করা পাঞ্জাবিদের খবর দেয়।
তারা দ্রুত এসে গুলি করা শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়লাম। আধাঘণ্টা তারা গুলি ছোড়েন। আমার কাছে একটা রাইফেল ছিল, আমি রিপ্লাই দিতেই পারিনি। আমি চুপচাপ খেতের মধ্যে শুয়েছিলাম। গুলি করা বন্ধ হলে আরও আধাঘণ্টা শুয়ে থাকি।
পরে ম্যানেজার সাহেবের রুমে চলে আসলাম। তাকে ডেকে উঠালাম। সেখান থেকে খাওয়া-দাওয়া করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। সেখানে যাওয়ার পরে রাতে সেখানে একজনের বাসায় আশ্রয় নেই। ভোরবেলা হঠাৎ দেখি বুটের শব্দ। তখন বোঝার বাকি নেই আর্মি আমার খোঁজ পেয়েছে।
বাসাওয়ালা বের হয়ে আর্মিদের বলছেন, ‘স্যার আমার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধা নাই আপনি খুঁজে দেখেন।’ তার আগের দিন তিনি কন্যাসন্তানের বাবা হন। ‘কন্যাকে খাওয়াতে হয়, প্রসাব করলে কাপড় পরিবর্তন করে দিতে হয়। এজন্য রাতে লাইট জ্বালাতে হয়। এ কারণে যদি মনে করেন আমার বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধা এসেছে তাহলে তো কিছু বলার নাই।’ মেজর সেই সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু দেখে বিশ্বাস করে চলে যান। আমি ছিলাম নিচতলায় আর পাঞ্জাবি আর্মিরা গেছে তিনতলায়। তারপরেও আমি দরজায় রাইফেল তাক করে ছিলাম যদি ঘরে প্রবেশ করেন একজন পাকসেনা হলেও আমি শেষ করে নিজে শেষ হব। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তারা ফিরে যায়।
এরপর আমি যখন নাস্তা খাচ্ছি তখন আমার বড় ভাই কান্নাকাটি করে ছুটে আসে। তিনি বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় চাপাইনে যে যুদ্ধ হয়েছে সেই যুদ্ধে আমার ভাই অঞ্জু মারা গেছে, লাশটা তো পাচ্ছি না। তখন বাড়িওয়ালা গফুর সাহবে বললেন, রঞ্জু তো নাস্তা করছে। বড় ভাইকে তিনি নাস্তা খেতে বললেন। আমি বললাম, নাস্তা খাওয়া লাগবে না। তাড়াতাড়ি বাসায় গিয়ে খবর দেওয়া দরকার যে আমি বেঁচে আছি। আমাকে দেখে যে দালাল পাঞ্জাবিদের খবর দিয়েছেন সেই দালালই আমার মৃত্যুর খবরটাও ছড়িয়ে দিয়েছিল।
যুদ্ধের সময় আমি দুই বার মারা যাই, বলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এখান থেকে চলে যাই ধামরাইয়ের রৌহা নামক একটা জায়গায়। আমি বজলু, শরিফসহ আরও কয়েকজনকে নিয়ে আমরা একটা অপারেশনে যাব। ধলেশ্বরী নদীর পাশে ৮ থেকে ১০ জন রাজাকার আছে। তাদেরকে মেরে আমরা আর্মস ও গুলি দখল করব। আমাদের আর্মসের ব্যাপক সংকট ছিল। আমরা কয়েক রাউন্ড গুলি করার পর তারা পালিয়ে যায়। সেখানে আমরা ৫ থেকে ৬টা রাইফেল পাই। আর গুলি পেয়েছিলাম অনেক।
১৬ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জে অপারেশনে গেলে দেখি মানিকগঞ্জ থানা খালি। এদিন যখন শুনতে পেলাম আমাদের বিজয় হয়েছে। তখন তো মহাখুশি। রাইফেল দিয়ে আনন্দে আকাশের দিকে ফাঁকা গুলি ছুড়লাম। ১০টার দিকে জানতে পারলাম ফেরি না পেয়ে পাক বাহিনী গ্রামের পর গ্রাম আগুনে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ফেরিওয়ালারা তো ভয়ে আগেই পালিয়ে গেছে। আমাদের এই দিকে আসতে না পেরে তারা গ্রাম জ্বালাচ্ছে। কামাল ভাই ছিল সেখানকার কমান্ডার। আমাদের নিয়ে তাদের প্রতিহত করার জন্য মনস্থির করি।
আমাদের রেঞ্জের বাইরে হওয়ায় আমরা গুলি করিনি। কিন্তু মানিকগঞ্জের ছেলেরা ফায়ার শুরু করে দিলো। এ সময় ওরা মর্টারশেল ছুড়ল। এ সময় মানিকগঞ্জের ৫ জন ছেলে মারা যায়। তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আমরা দাফন করি। এরপর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় আমি বাড়িতে আসতে পারিনি। বাড়িতে জানে যে আমি মারা গেছি। বিজয়ের পরে ৭ দিন হয়ে গেছে। আমি বাড়িতে ফিরিনি। পরিবার ভেবে নিয়েছিল আমি মারা গেছি। পরবর্তীতে ২৪ ডিসেম্বর বাড়িতে আসি।
সহযোদ্ধাদের নিয়ে স্মৃতিচারণ
আমার অধীনে যারা ছিল তাদেরকে আমি ভালোই বলব। প্রশিক্ষণ শেষে আমাদের পাঠানোর সময় শপথ করানো হয়েছিল। শপথে কয়েকটি জিনিস থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছিল। যেমন বাবা-মার কাছে নিজের অবস্থান সম্পর্কে জানানো যাবে না, পাঁচ বছরের জন্য বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ভুলে যেতে হবে, ব্যক্তিস্বার্থে কোনো ব্যক্তির ক্ষতি কিংবা কাউকে হত্যা করা যাবে না, আর্মস ব্যবহার করে কোনো নারীকে ধর্ষণ করা যাবে না, লুট কিংবা ডাকাতি করা যাবে না। কিন্তু একজন শর্ত ভঙ্গ করেন। সাথে সাথে তার আর্মস কেড়ে নিয়ে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করি।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বর্তমান অবস্থা
এখন যারা বেঁচে আছেন সেই বীর মুক্তিযোদ্ধারা ভালো নেই। সম্মানী হিসেবে সরকার ২০ হাজার করে টাকা দিচ্ছে। এই টাকায় আসলে একটা পরিবার চলে না। তা দিয়ে আসলে কিছু হয় না। তার পরেও সরকার টাকা দিচ্ছে, আমি বলব মন্দের ভালো। আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গর্বিত।
যুদ্ধের সময় সাভারে আমরা ছিলাম ৯৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু বর্তমানে সাভারে ৫ শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেছেন। তারা কীভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেন, আমার আসলে বোধগম্য নয়। যারা দালাল ছিল তারাও নাকি বীর মুক্তিযোদ্ধা। এজন্য আমি কোনো প্রোগ্রামে যাই না। দালালরা কিংবা অমুক্তিযোদ্ধারা আমার সামনেই মুক্তিযোদ্ধার সম্মানে বসে থাকবে এটা দেখলে আমার মাথা নিঁচু হয়ে যায়।
এমএসআর