মেধাতালিকায় প্রথম হয়েও পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি খুলনার মীম আক্তারের। নিজ যোগ্যতায় চাকরি পাওয়ার খবরে ভূমিহীন পরিবারটিতে ছিল আনন্দের বন্যা। হঠাৎ জানতে পারেন, স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় তাকে চাকরি দেওয়া হচ্ছে না। খুশির বদলে পরিবারে নেমে আসে কান্নার রোল।

তবে এখনো যে আশার আলো নিভে যায়নি। আবার চাকরি হবে, এই নিশ্চয়তাও দিচ্ছে না কেউ। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তাকে ঘর দেবেন খুলনা জেলা প্রশাসক।

পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, পুলিশ হেড কোয়ার্টারকে সার্বিক বিষয় জানানো হয়েছে। সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সেখান থেকে ফিরতি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি। দু-এক দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানা যাবে।

মীম আক্তার খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ৩ নম্বর আবাসিক এলাকার ১ নম্বর রোডে ডাক্তার বাবর আলীর বাড়ির ভাড়াটে বাসিন্দা। বাবা মো. রবিউল ইসলাম খুলনার বয়রা ক্রস রোডে ছোট্ট একটি দোকান ভাড়া নিয়ে লেপতোশকের ব্যবসা করেন। দোকানটির নাম ‘বেডিং হাউস’। টানা ৩২ বছর ধরে এই এলাকায় ভাড়াটে হিসেবে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন রবিউল ইসলাম। মীম আক্তারের জন্ম খুলনায়। জন্মসনদ খুলনা সিটি করপোরেশনের। বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রও খুলনার।

পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সাধারণ নারী কোটায় আবেদনের পর ২৫ অক্টোবর খুলনা শিরোমণি পুলিশ লাইনসে শারীরিক যোগ্যতা যাচাই হয়। ২৫, ২৬ ও ২৭ অক্টোবর তিন দিন ধরে যাচাইয়ে উত্তীর্ণ হন মীম। ২৮ অক্টোবর লিখিত পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হওয়ার পর মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন তিনি। ফলাফলে সাধারণ নারী কোটায় প্রথম। রোল নম্বর ১০৬১। কিন্তু মেডিকেলে তার চোখের সমস্যা ধরা পড়ে এবং জটিলতা দেখা দেয় স্থায়ী ঠিকানা নিয়েও।

শনিবার (১১ ডিসেম্বর) খুলনা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভির আহম্মেদ তাকে জানিয়ে দেন, স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় তাকে চাকরিতে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঘটনাটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর শুরু হয় আলোচনা ও সমালোচনা। 

এরপর মীম আক্তার রোববার (১২ ডিসেম্বর) জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে গিয়ে মীম বলেন, স্যার, আমরা ভূমিহীন। মেধাতালিকায় প্রথম হয়েও আমার চাকরিটা হচ্ছে না। স্থায়ী ঠিকানা না হওয়ায়। ডিসি স্যার বলেছেন, এখানে আমার কিছু করার নেই। এসপি সাহেবের সঙ্গে কথা বলেন। পরবর্তীতে এসপি কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। এসপি স্যার ছুটিতে রয়েছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্যার বলেছেন, তোমার বিষয়টি আমাদের মধ্যে খুব আলোচনা হচ্ছে। আমরা কাগজপত্র পুলিশ হেড কোয়ার্টারে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আলোচনা চলছে।

খুলনা জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, মেয়েটি আমার কাছে এসেছিল। ঘটনাপ্রবাহ জানিয়েছে তবে পুলিশে নিয়োগের বিষয়ে আমাদের কোনো করণীয় নেই। যেহেতু তারা ভূমিহীন, সে কারণে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় তাদের ঘর দেওয়া হবে। যেন মেয়েটি ও তার পরিবার স্থায়ী একটি ঠিকানা পায়।

খুলনা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভির আহম্মেদ জানান, এখনো মীমের পুলিশে চাকরির সম্ভাবনা রয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে পুলিশ হেড কোয়ার্টার ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আলোচনা চলছে। আশা করি দু-এক দিনের মধ্যেই একটা সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, মীম পরিবারের সঙ্গে খুলনায় দীর্ঘদিন ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করছেন। তাদের কোনো জমি নেই। তার বাবার বাড়ির বাগেরহাট জেলার চিতলমারি থানার বড়বাড়িয়া গ্রামে। সেখানেও তার বাবার নামে কোনো জমি নেই। তার দাদা এখনো জীবিত রয়েছেন। যেহেতু তার দাদা জীবিত, সে কারণে তার বাবার নামে সেখানেও কোনো জমি নেই। নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। ঠিকানা থাকতে হবে। সেটি হচ্ছে না।

মোহাম্মদ মিলন/আকরামুল ইসলাম/এনএ