পাবনায় গুলিতে নিহত স্বতন্ত্র প্রার্থীর মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ
পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর (ঘোড়া প্রতীক) প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় নিহত স্বতন্ত্র (আনারস প্রতীক) চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলমের (৪০) মরদেহ নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী। শনিবার (১১ ডিসেম্বর) বিকেলে ভাঁড়ারার নিজ বাড়ি থেকে অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ নিয়ে পুরো শহর প্রদক্ষিণ করে ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এর আগে সকালে ইউনিয়নের চারা বটতলার ইন্দারা মোড় কালুরপাড়া এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন ইয়াসিন আলম। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার সময় তিনি মারা যান।
বিজ্ঞাপন
নিহত ইয়াসিন আলম ভাঁড়ারা ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া এলাকার মোজাহার খাঁর ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদের আপন চাচাতো ভাই বলে জানা গেছে।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন সুলতান মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খান বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। এলাকায় পোস্টার ছেঁড়া থেকে শুরু করে প্রচারণা মাইক ও অফিস ভাঙচুর, প্রচারণায় বাধা, কর্মীদের হুমকি ও আমাকেসহ আমার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। আমার আপন চাচাতো ভাই স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলমকে হত্যার মাধ্যমে প্রাণনাশের হুমকি বাস্তবায়ন করল। সাঈদ নিজে আমার ভাইয়ের কপালে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেছে বলে দাবি করেন সুলতান মাহমুদ।
তিনি বলেন, এর আগেও বর্তমান চেয়ারম্যান ৪৭টি খুন করেছে। তার কোনো বিচার হয়নি। ২৫ বছরের চেয়ারম্যান এবার ভরাডুবির শঙ্কায় এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে। হাজার হাজার মা-বোনের চোখের পানি ঝড়ছে। আল্লাহ একদিন তার বিচার করবে। সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে বর্তমান চেয়ারম্যানের রাজত্বকালের সমাপ্তি ঘটবে।
এ ঘটনায় বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খান বলেন, রাতে আমার লোকজন ভোট চাইতে গেলে কালাম মেম্বারকে সুলতানের লোকজন হাতুড়িপেটা করে। সকালে আমি তাকে দেখতে যাই। ফিরে আসার পথে কোলাদী ইন্দ্রারা মোড়ে সিএনজিতে করে এসে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে সুলতানের লোকজন আমাদের ওপর বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে। এ সময় আমাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরলে আমার ছোট ভাইয়ের পায়ে গুলি লাগে। ছোট ভাই গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাঁড়ারা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। অন্তত ৮-১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইয়াসিন আলম মারা গেছেন। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখনো মামলা হয়নি বলে তিনি জানান।
পাবনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা না করতে সব প্রার্থীকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি কোনো প্রার্থীর লোকজন হামলা চালায় তাহলে লিখিত অভিযোগ পেলে শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে পাবনা সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
রাকিব হাসনাত/আরএআর