‘রক্তের দাগ শুকানোর আগেই আমরা অযোগ্য ঘোষিত হলাম। কিন্তু কেন? গতকাল ঘোষিত কমিটিতে যাদের আনা হয়েছে, তারা কি আমাদের চেয়ে যোগ্য? আন্দোলন সংগ্রাম, মানবতার সেবায় ও হাজারো কর্মসূচি পালনে আমাদের অযোগ্যতা কোথায়? সারাদেশে বিএনপির রাজনীতিচর্চায় অন্যতম মডেল খুলনা মহানগর বিএনপি কেন আক্রমণের শিকার?’

শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এমন আবেগঘন এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

সদ্য কেন্দ্র থেকে ঘোষিত খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির কমিটি নিয়ে দেওয়া স্ট্যাটাসে নানা প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। একই সঙ্গে তার অনুসারীদের ধৈর্যধারণ ও পরবর্তী করণীয় বিষয়ে মতবিনিময় করবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া খুলনা বিএনপির সার্বিক বিষয় নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে আসবেন বলে জানান তিনি।  

সদ্য বিদায়ী মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ফেসবুকে তার দেওয়া স্ট্যাটাসে লিখেছেন—

‘সারাদেশ খুলনার দিকে তাকিয়ে থাকে যে খুলনায় বিএনপি কর্মীরা যেকোনো সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে শক্ত প্রতিবাদ জানাবে, তাই তো খুলনা বিএনপি সবার সেরা।

সেই বিএনপিকে নিয়ে দলের এ অবহেলা কেন? যারা দল প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছরে ৪৪ দিন খুলনায় আসেনি, থাকেনি দল ও দলের নেতাকর্মীদের পাশে, তিনটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যাদের কোনো ভূমিকা ছিল না, পড়েনি কখনো মিথ্যা মামলায়, থাকেনি আহত কর্মীর পাশে, পড়েনি জানাজা, ছিল না দাফনে ও আহত কর্মীর চিকিৎসাসেবায়। যারা এই শহরের পাঁচটা রাস্তার নাম জানে না, বলতে পারবে না পাঁচজন বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম, পাঁচজন খ্যাতিমান ডাক্তারের নাম, পাঁচ গুণীজনের নাম, পাঁচ শিক্ষাবিদের নাম। যারা মাঠের কর্মীদের চেনে না, যারা নির্বাচন করতে এসে বিএনপি অফিস চিনেছে, চিনেছে আদালতপাড়া ও হাসপাতাল। দুই দফা করোনাকালে যাদের জনগণ পাশে পায়নি, তারা চায় খুলনা বিএনপির কর্তৃত্ব, ধিক তাদের প্রতি।

তিনি আরও লিখেছেন, দুঃশাসনের ১২ বছরে দেশনেত্রীকে নিয়ে তিনটি মহাসমাবেশ লংমার্চ, রোড মার্চ, গণ-অবস্থান, গণ-অনশন, রাজপথ-রেলপথ ঘেরাও, হরতাল-অবরোধে কি কখনো তারা দলের পাশে, কর্মীর পাশে ছিল? তাহলে কেন তাদের প্রেসক্রিপশনে দল গঠিত হবে? কেন রাজপথের ত্যাগী নেতাকর্মীরা অব মূল্যায়িত হবে এ প্রশ্ন সবার।

গত চার বছর তাদের হাতে গড়া যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল পরিপূর্ণতা পায়নি, গড়ে ওঠেনি মাঠের, সংগঠনে হয়েছে বিভক্তি, বেড়েছে অসন্তোস, গড়েছে ব্যক্তির সমর্থক গোষ্ঠী।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, দল গঠনে নেতৃত্বে প্রাধান্য পেয়েছে শহরের বড় ছিনতাইকারী, কর্মীর খুনির সহযোগী, মাদক কারবারি, মোটরসাইকেল চোর, ক্লাব পাড়ার মাতাল জুয়াড়ি। পদবঞ্চিত হয়েছে আন্দোলন-সংগ্রামে সাহসী ভূমিকা পালনকারীরা, সাবেক ছাত্রনেতা মরহুম এসএম কামালের মতো রাজপথের সাহসী নেতৃত্বকে পদহীন হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। তার মৃত্যুর পর কতিপয় ব্যক্তির মায়াকান্না ও অভিনয় দেখেছে দলের নেতাকর্মীরা ও জনগণ।

গত চার বছর ঢাকায় বসেছে দুই নেতার নানা ষড়যন্ত্রের বৈঠক, ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনেক নেতাকর্মীকে। বলা হয়েছে মঞ্জু-মনির সাথে থাকলে পদ পাওয় যাবে না, বিকল্প বিএনপি তৈরি করে প্যারালাল কর্মসূচি পালনের ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে, খুলনা মহানগর বিএনপির কর্মসূচিতে আসতে নিষেধ করা হয়েছে, এ জন্য চালু করা হয়েছে টোপের রাজনীতি। 

তিনি উল্লেখ করেন, ৪৪ বছরে গড়ে ওঠা আমাদের ঐতিহ্যের সংগঠন আন্দোলন-সংগ্রামের প্রাণশক্তি কর্মী গড়ার সংগঠন আমাদের গর্বের অহংকারের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে দুর্বৃত্ত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, কলুষিত করা হয়েছে ছাত্ররাজনীতিকে। ৪৪ বছরে তৈরি করা আমাদের কর্মীদের বিপথগামী করা ও আমাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিছু পদলোভী, বিবেকবর্জিত, দুর্বল চিত্তের কর্মী ছাড়া সকলেই আমাদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করে রাজনীতি করেছে।

এসব বিষয় দলের সর্বোচ্চ নেতা ও ফোরামে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারপরও একে একে চলেছে দল-বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড। সরকার চায় বিএনপি দুর্বল হোক এবং আমাদের মাঝে কিছু ব্যক্তির চাওয়া একই। তাহলে কি আমরা আমাদের ধ্বংস চেয়ে চেয়ে দেখব? নিশ্চয়ই না। রাজনৈতিক কর্মীরা অন্যায়-অসত্যের বিরুদ্ধে কথা বলবে, করবে সত্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং এর কোনো সীমারেখা নেই।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দলের এ সংকটে প্রয়োজন ধৈর্য, ঐক্যবদ্ধতা ও আগামীর রাজনীতি নিয়ে সুচিন্তিত সুস্থ ভাবনা এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ।

এ ক্ষেত্রে আমি সবার সঙ্গে পরামর্শ করব, মতবিনিময় করব এবং একটি প্রতিবাদী কর্মসূচি দাঁড় করাব ইনশাল্লাহ এবং সেটি হবে দলের স্বার্থে ও নিয়মতান্ত্রিক। আমাদের সকলের দায়িত্ব ধৈর্য ধারণ করা, সকল নেতাকর্মীর সাথে কথা বলা, বিভ্রান্ত না হওয়া, জনমত গড়ে তোলা ও মহান রব্বুল আলামিনের কৃপা কামনা করা।

দু-এক দিনের মধ্যে আমি সংবাদ সম্মেলের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে খুলনা বিএনপিতে ঘটে যাওয়া সকল বিষয় উপস্থাপন করব ইনশাল্লাহ।

আল্লাহ আমাদের সহায় হোন আমিন।’

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) কেন্দ্র থেকে খুলনা জেলা ও মহানগর বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি গঠন ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে সদ্য বিদায়ী জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনাকে খুলনা মহানগরের আহ্বাক এবং জেলায় আমির এজাজ খানকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।

অন্যদের মধ্যে খুলনা মহানগর কমিটিতে তরিকুল ইসলাম জহিরকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। এ ছাড়া খুলনা জেলা বিএনপির কমিটিতে আবু হোসেন বাবুকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও মনিরুল হাসান বাপ্পীকে সদস্যসচিব করা হয়েছে।

মোহাম্মদ মিলন/এনএ