কাজিরহাট-আরিচা পারাপারের অপেক্ষায় ৪ শতাধিক যানবাহন
পাবনার কাজিরহাট-আরিচা রুটে ফেরি-সংকটের কারণে দুই পাড়ে আটকা পড়েছে চার শতাধিক যানবাহন। কাজিরহাটে আড়াই ও আরিচায় এক কিলোমিটারজুড়ে তৈরি হয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। এতে দূরপাল্লার যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছে। ট্রাক টার্মিনাল, আবাসিক হোটেল, পাবলিক টয়লেট, যাত্রীছাউনি ও লাইটিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় ট্রাকচালকরা ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়।
মাত্র চারটি লক্কড়ঝক্কড় ফেরি দিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। ঘাটের পল্টুন সরিয়ে সেনাবাহিনীর পল্টুন স্থাপন করা হয়েছে। তাই ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ জন্য এ অবস্থার তৈরি হয়েছে বলে শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে বেড়া উপজেলার কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার সকালে আমাদের পল্টুন সরিয়ে সেনাবাহিনীর পল্টুন স্থাপন করা হয়েছে। তাদের জাহাজ আসছে। ট্যাংক লোড হবে। তাই আমাদের ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আবার রাতে ঘন কুয়াশা থাকায় রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তবে আজ সকালেও ফেরি চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত ফেরি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বেগম রোকেয়া ও সুফিয়া কামাল নামে ফেরি দুটি এখান থেকে শিমুলিয়া ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছোট ছোট পুরোনো ফেরি দিয়ে ঘাট কোনোমতে সচল রাখা চেষ্টা চলছে। আমাদের এখানে যাত্রীর চাপ বেশি থাকলেও লক্কড়ঝক্কড় ফেরি দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজনের ব্যত্যয় ঘটলে মালামাল খালাস করতে হয়। ফলে ট্রাকসহ অনেক যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু এড়িয়ে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে ফেরিতে ঢাকায় যাওয়া-আসা করছে। এতে নৌপথে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে কাজিরহাট ফেরিঘাটে দেখা গেছে, পঞ্চগড়, চাপাই, মেহেরপুর, নওগা, বগুড়া, চিলমারীসহ কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ জেলার ট্রাক ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছে ফেরি পারের জন্য।
যাত্রী ও যানবাহনের চালকেরা অভিযোগ করেন, এই নৌপথে কমপক্ষে ৮ ফেরির প্রয়োজন। মাত্র চারটি ফেরি দেওয়া হয়েছে। সেগুলো পুরোনো ও ছোট হওয়ায় চার থেকে পাঁচটি ট্রাক পারাপার করা যায়।
ট্রাকচালকদের দাবি, বঙ্গবন্ধু সেতুতে নির্ধারিত ওজনের ব্যত্যয় হলে মাল খালাস করতে হয়। আর ফেরিতে এই সমস্যা নেই। এ জন্য আমরা নদী পারাপারকে বেছে নিই। টাকা দিয়ে ফেরি পারাপার হই। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ঘাটে পর্যাপ্ত ফেরি দেয় না কেন? এমন প্রশ্ন করেন তারা।
কাজিরহাট ঘাটে কথা হয় পঞ্চগড় থেকে আসা মারুফ ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিন দিন ধরে ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছি। সিরিয়াল পাওয়া তো দূরের কথা। বোধ হয় আরও তিন-চার দিন ঘাটে অবস্থান করা লাগতে পারে। একটি ফেরিতে তিন-চারটি করে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসির কাজীরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, চারটি ফেরি দিয়ে ঘাট সচল রাখা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ সেনাবাহিনীর জাহাজ এলে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। তাদের পল্টুন সরিয়ে আমাদের পল্টুন স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে। কিন্তু দুই পারে শত শত ট্রাক আটকা পড়ে আছে। ফেরি না বাড়ালে ঘাট সচল করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। আরও দুটি পল্টুন স্থাপনের দাবি জানান তিনি।
রাকিব হাসনাত/এনএ