প্রবাসফেরত মিজানুর রহমান। দীর্ঘ এক যুগ মালয়েশিয়ায় ছিলেন। ছয় বছর আগে দেশে ফেরা এ যুবক এখন স্বাবলম্বী। সচ্ছলতা ফিরেছে তার পরিবারে। ফিরে এসেছে সুদিনও। নিভৃত গ্রামে থেকেই এখন তার বার্ষিক আয় ৮ লাখ টাকা।

নিজে কিছুর করার প্রত্যয়ে দেশে ফিরে আসা মিজানুর এখন সফল চাষি। বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ করে নিজে এখন যেমন বদলে গেছেন। তেমনি গ্রামেও এনেছেন মাল্টা বিপ্লব। কঠোর পরিশ্রমী মিজানুর হঠাৎ করেই এই সফলতা পাননি।

মাল্টাচাষি হয়ে ওঠার নেপথ্যে একটি টেলিভিশন চ্যানেলের কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান থেকে প্রেরণা পেয়েছেন। ওই অনুষ্ঠান দেখে তিনি মাল্টা চাষে আগ্রহী হন। দেশে ফিরে শুরু করেন মাল্টা চাষ। এখন তাকে অনুসরণ করে অনেকেই মাল্টার বাগান গড়েছেন।

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কুমেদপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে থাকেন মিজানুর রহমান। ওই গ্রামের প্রায় দেড় একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ করছেন প্রবাসফেরত এই যুবক। ২০১৬ সালের শুরুর দিকে ৪০০টি মাল্টাগাছ রোপণ করেন মিজানুর। পাঁচ বছরেই তিনি নিজেকে একজন সফল মাল্টাচাষি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

ঢাকা পোস্টকে মিজানুর রহমান বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় থাকা অবস্থায় কৃষিবিষয়ক একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মাল্টা চাষে আগ্রহী হই। দেশে ফিরে এসেই মাল্টা চাষ শুরু করি। বর্তমানে আমার বাগানে ৪০০টি মাল্টা গাছসহ অন্যান্য ফলের গাছ রয়েছে। তবে এখন সেটি মাল্টার বাগানে পরিণত হয়েছে। ওই বাগান থেকে বছরে প্রায় ৮ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি হচ্ছে।’

বর্তমানে তার বাগানের মাল্টা নিজ এলাকার হাটবাজার ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর, রংপুর ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন
এলাকায় বাজারজাত করা হচ্ছে। ওই বাগান থেকে চারাও উৎপাদন করছেন তিনি।

মিজানুর আরও জানান, তার বাগানে মাল্টার পাশাপাশি সৌদি আরবের খেজুর, কমলা ও লিচু গাছও রয়েছে। চারা রোপণের দুই বছরের মধ্যে মাল্টার ফলন শুরু হয়। তিন বছর পর পূর্ণাঙ্গভাবে ফল দেওয়া শুরু হয়। গাছপ্রতি মৌসুমে ৪০০ থেকে ৪৫০টি মাল্টা ধরে। অন্যান্য ফলের গাছ থাকলেও মাল্টা চাষের প্রতিই তার বেশি গুরুত্ব।

এদিকে মিজানুরের সাফল্য ও বাগানের ভালো ফলন দেখায় এলাকার অনেকেই এখন এই মাল্টা চাষে ঝুঁকছেন। স্থানীয়রা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকার নতুন উদ্যোক্তরাও এই মাল্টা বাগানটি দেখতে আসেন। স্বল্প খরচে ফলন বেশি ও লাভ ভালো হওয়ায় এখন পীরগঞ্জ উপজেলায় ছোট-বড় মিলে অন্তত দুই শতাধিক মাল্টার বাগান গড়ে উঠেছে।

একই উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের জোতবাজ গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, প্রথমে বাড়ির উঠানে শখের বশে মাল্টা চাষ শুরু করেন। নিজেই পরিচর্যা করতেন। পরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে একটু বড় পরিসরে চাষাবাদ শুরু করেন। তিন বছরের মাথায় স্বল্প খরচে মাল্টা চাষ থেকে সাফল্য পাই।

বড়দরগাহ ইউনিয়নের ছোট মির্জাপুর গ্রামের রয়েল মিয়াও লাভবান হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। বারি মাল্টা-১ গ্রিন জাতের সুমিষ্ট একেকটি মাল্টার ওজন প্রায় ২০০-৩০০ গ্রাম। চাহিদা ভালো হওয়ায় বাগান থেকেইে এই মাল্টা পাইকারি দরে বিক্রির কথাও জানান তিনি।

কৃষি বিভাগ বলছে, বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। অনেকেই এখন নিজেদের কৃষি জমিতে মাল্টা চাষ করছেন। মাল্টা সাইট্রাস জাতের বিদেশি ফল। কমলা আর বাতাবি লেবুর সংস্করণে এ ফলের সৃষ্টি। এর আদি উৎপত্তিস্থল ভিয়েতনাম, দক্ষিণ চীন এবং উত্তর-পশ্চিম ভারত। মাল্টা ফল বেশ উপকারি, খেতে সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, কৃষকদের ধান, গম, ভুট্টা চাষের পাশাপাশি উচ্চমূল্যের ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বর্তমানে পীরগঞ্জে প্রায় ৩০ একর জমিতে ছোট বড় দুই শতাধিক বাগানে মাল্টা চাষ হচ্ছে।

বিভিন্নভাবে চাষিদের মাল্টা চাষে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। এনএটিপি-২ প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে সার দেওয়া হচ্ছে। উপজেলায় সর্বনিম্ন পাঁচ শতাংশ ও ঊর্ধ্বে দেড় একর জমির বাগান রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এমএসআর