কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সফর উদ্দীনের মাদক (ফেনসিডিল) সেবনের দুটি ভিডিও ফাঁস হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। তার ভিডিও দেখে ক্ষোভে ফুঁসছেন অনেকে। এলাকাবাসী তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

প্রকাশ হওয়া ১ মিনিট ৪ সেকেন্ড ও ১ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের দুটি ভিডিওতে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতা সফর উদ্দীন পাটিকাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে তার কক্ষে বসে ফেনসিডিল সেবন করছেন। আবার কক্ষের সঙ্গে লাগোয়া টয়লেটে গিয়েও মাদক সেবন করেন। তবে কবে এবং কোথায় ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

সফর উদ্দীন পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ও একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি ২০১১ সাল থেকে টানা দুবার চেয়ারম্যান পদে আছেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা, কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, তিনি একজন জনপ্রতিনিধি। একজন চেয়ারম্যান হিসাবে তার দায়িত্ব এলাকা মাদক মুক্ত করা। কিন্তু ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, চেয়ারম্যান নিজেই মাদক সেবন করছেন। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, দ্রুত তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তিনি বিভিন্ন সভা সমাবেশে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলেন। অথচ তিনি নিজেই ফেনসিডিল খান। 

জানা গেছে, দেশে চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে ৫ জানুয়ারি এই ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ করা হবে। এবারও দলীয় মনোনয়ন পেতে স্থানীয় ইউনিয়ন কমিটি থেকে তার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন নিতে সফর আলী ঢাকায় গেছেন সোমবার সকালে। 

এ বিষয়ে পাটিকাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইব্রাহীম খান বলেন, যেটা দেখলাম, এটা যদি সত্যি হয়, তবে খুবই খারাপ কাজ করেছেন। এটা লজ্জাজনক।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বলেন, দলীয় সভায় বিষয়টি তুলে ধরা হবে। সর্বসম্মতিক্রমে যে সিদ্ধান্ত হবে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী বলেন, যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তবে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কারণ মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের সরকার জিরো টলারেন্সে। দলীয়ভাবে অবশ্যই এর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমাজটাকে এই মাদক নষ্ট করছে। অফিসে বসে মাদক সেবন কাম্য নয়।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সফর উদ্দীন বলেন, একটি চক্র আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমি এসব খাই না। ওই ভিডিও দেখিনি। আমাকে কয়েকজন ফোন করে জানিয়েছে। ভিডিওটি এডিটিং করে তৈরি করা হয়েছে। তবে কারা এ কাজ করছে তা আমার জানা নাই। 

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাধন কুমার বিশ্বাস বলেন, আমি এ বিষয়ে অবগত না। কেউ কোনো অভিযোগও করেনি। আপনার মাধ্যমেই প্রথম জানলাম। বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই অন্য মাদকসেবীদের মতোই মাদক সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

রাজু আহমেদ/আরআই