‘আমিও এতিম। বাবাকে কখনো দেখিনি। বাবার আদর পাইনি। বাবা ছাড়াই জীবন সংগ্রাম চালিয়ে এসেছি। আজকে পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করছি। বাবা ছাড়া জীবনে বড় হওয়া কতটা কষ্টের তা আমি টের পেয়েছি। তাই আমিও চাই যোগ্যরা যেন মূল্যায়িত হয়।’

শনিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল  ইসলাম। এ সময় উপস্থিত সকলেই আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন। 

পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি নিজ যোগ্যতায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। জীবনে সংগ্রাম করে এত বছর পার করেছি। আমার বয়স যখন দুই বছর তখন বাবা মারা যান। আমি যে কতটা অসহায় ছিলাম তা বলে শেষ করা যাবে না। সেই সংগ্রাম আমাকে আজ দেশসেবার দায়িত্ব দিয়েছে। আজীবন অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে যাব।

যোগ্যতা থাকলে মূল্যায়ন হবে উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, ১৯৯৬ সালে আমিও কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। তখন কনস্টেবল হতে পারি নাই তবে আজ আমার সন্তানের মতো ৬৫ জন কনস্টেবল নিয়োগ দিয়েছি। আমি আশা করি পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য আগামীতে তোমরা কাজ করবে। সর্বদা দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবে। 

মতবিনিময় সভায় সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত মাহমুদা আক্তার বলেন, আমার বাবা গাড়ি চালক। সংসারের কী দৈন্যদশা তা আমরা জানি। অনেক শখ ছিল যা বাবা পূরণ করতে পারেননি। আজকে সেই বাবার জন্য একটা সুখবর দিতে পারছি এটা আমার জন্য আনন্দের।

এ সময় ফরিদা আক্তার নামে এক অভিভাবক বলেন, পুলিশের চাকরি হবে, ঘুষ দিতে হবে না এটা কখনো ভাবিনি। ভেবেছিলাম ঘুষের টাকার জন্য হয়তো চাকরি হবে না। কিন্তু এমন সত্য দিন আসবে তা কখনো কল্পনাও করিনি। মাত্র ১০০ টাকায় চাকরি পেয়েছে আমার ছেলে। 

পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী জেলায় ট্রেইনি রিক্রুট পুলিশ কনস্টেবল (টিআরসি) পদে গত ১৬ নভেম্বর থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে জেলার ৬৫ তরুণ-তরুণীকে চাকরি দেওয়া হয়। ব্যাংক ড্রাফটে ১০০ টাকা জমা দিয়ে পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রায় ২ হাজার ৬০০ তরুণ-তরুণী অংশ নেন। শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩২৮ জন থেকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় ১০৮ জন। ১০৮ থেকে ৬৫ তরুণ-তরুণীকে চাকরি দেওয়া হয়। নিয়োগপ্রাপ্ত ৬৫ জনের মধ্যে সাধারণ কোটায় ৩৪ জন পুরুষ ও ৮ জন নারী, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ১১ জন পুরুষ ও ২ জন নারী, পোষ্য কোটায় ৬ জন পুরুষ, আনসার কোটায় ৩ জন এবং এতিম কোটায় ১ জন রয়েছে।

মতবিনিময় সভায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) খালেদ ইবনে মালেকসহ নিয়োগপ্রাপ্তদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। শেষে নিয়োগপ্রাপ্তদের ফুল ও মিষ্টিমুখ করে স্বাগত জানান পুলিশ সুপার। 

হাসিব আল আমিন/আরএআর