প্রতি বছর বন্যায় দিশেহারা থাকে রাজবাড়ীর নিন্মাঞ্চলের কৃষকরা। তাদের জন্য সুখবর হচ্ছে নতুন প্রজাতির বন্যা সহনশীল ধান এজেড ৭৬০০। এ জাতের আমন ধান চাষিদের আলোর মুখ দেখাচ্ছে। বন্যা সহনশীল হওয়ায় জেলার কৃষকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ আমন ধান।

জানা গেছে, এ জাতের আমন ধান শুধু বন্যায় সহনশীলই নয় বরং যেকোনো জাতের ধানের চেয়ে উচ্চ ফলনশীলও। তেমনি রোগ বালাইও অনেক কম হয়। তাই বন্যায় ক্ষতি পোষাতে এ জাতের আমন ধানের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে এ অঞ্চলের কৃষকদের। আর উচ্চ ফলনশীল এ জাতের বীজ দিয়ে কৃষকদের সহযোগিতা করছে জার্মানভিত্তিক কোম্পানি বায়ার ক্রপ সায়েন্স। এ জাতের ধান চাষ করে সাফল্যও পাচ্ছেন তারা। এ জাতের ধান থেকে প্রতি একরে ৫৫-৬৫ মণ ধান পাচ্ছেন কৃষকরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ জেড ৭০০৬ ধান বন্যা সহনশীল হওয়ায় লাগানোর পর ১২ দিন পর্যন্ত ৮ ফুট পানির নিচে ডুবে থাকার পরও কোনো ক্ষতি হয় না। এ জেড ৭০০৬ এর জীবনকাল ১২০-১২৫দিন। এ ধান বিএলবি প্রতিরোধী ও উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় বিঘা প্রতি ফলন ২০-২৫ মণ এবং প্রতি একরে ৫৫-৬৫ মণ ফলন হয়। চলতি মৌসুমে জেলায় ৫০ হাজার ২০৬ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে।

জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বায়ার ক্রপ সায়েন্স লিমিটেড ১৪১টি দেশের খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য দেশের কৃষকদের নিয়ে কাজ করছে।বাজারে নানা প্রজাতির হাইব্রিড ধানের মধ্যে বায়রার এ্যারাইজ এজেড-৭৬০০ ব্যাপক ফলনে সহায়ক। বায়রার ক্রপ সায়েন্স প্রতিনিয়ত কৃষি উৎপাদন ও সংরক্ষণ নিয়ে সরকারে সঙ্গে কাজ করে থাকে। নতুন নতুন উৎপাদিত বীজ বিনা মূল্যে বিতরণ করা এবং ফসলের মান ও উৎপাদন ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র বাজারজাত করছে এ প্রতিষ্ঠানটি।

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের কৃষক শফুল্লা মন্ডল বলেন, আমাদের ব্লকে ২০০ বিঘা জমি আছে। এর মধ্যে এবার প্রায় ১৫০ বিঘা জমিইতে এই জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। কারণ এ জাতের আমন ধানে রোগ-বালাই কম। আমরা যে জাতের ধান চাষ করতাম তার থেকে নতুন এই জাতের ধানের ফলন বেশি হয়েছে।

সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের কৃষক সবুর শেখ বলেন, আমরা আগে যে জাতের আমন ধান চাষ করতাম তার থেকে প্রায় দ্বিগুণ ফসল হচ্ছে নতুন এই জাতের ধান থেকে। এর চেয়ে বড় কথা হচ্ছে জাতটি বন্যায় সহনশীল ও রোগ বালাই কম। এ জাতের ধান চাষ করে আমরা আগের চেয়ে বেশি লাভবান হবো।

বায়ার ক্রপ সায়েন্স লিমিটেডের ফরিদপুর আঞ্চলিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মানছুর রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, এ জাতের আমন ধানের বিশেষত্ব হচ্ছে বীজ রোপণের পর অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যায় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ক্ষেত তলিয়ে থাকলেও ফসলের কোনো ক্ষতি হয় না। পাশাপাশি নতুন জাতের আমন ধানের এ জাতটি যেমন বন্যা সহনশীল, তেমনি উচ্চ ফলনশীলও। পাতা পোড়া (বিএলবি) রোগসহ অন্য জাতের ধানের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক বেশি এ জাতটিতে। রয়েছে ধান ঝরে না পড়ার গুণও। হাইব্রিড এ জাতের ধান চাষ করে একর প্রতি ৫৫-৬৫ মণ ধান পাচ্ছে এ  অঞ্চলের কৃষক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এসএম শহীদ নূর আকবর ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতানুগতিক পুরাতন জাতের ধান চাষ থেকে কৃষকদের সরে আসতে হবে। কারণ দীর্ঘ দিন একই জাতের ধান আবাদ করলে রোগ-ব্যাধি বেশি হয়। নতুন অ্যারাইজ এজেড-৭০০৬ জাতের ধান উচ্চ ফলনশীল ও বন্যা সহনশীল। পাতা পোড়া (বিএলবি) রোগ প্রতিরোধী। ধান ঝরে পড়ে না। এ ধরনের হাইব্রিড জাতের ধান চাষ যদি আমরা বাড়াতে পারি তাহলে কৃষক লাভবান হবে। এছাড়া এই ধান দ্রুত ফলন দেয়। ফলে এই ধান কাটার পর জমিতে অন্য ফসলও লাগানো যায়।

এসপি