রংপুর নগরে ঘাঘট নদীর কোল ঘেঁষে শুরু হয়েছে তাবলিগ জামাতের আঞ্চলিক ইজতেমা। বিশ্ব ইজতেমায় না যাওয়া রংপুর জেলার ২ লাখেরও বেশি মুসল্লি এতে অংশ নেবেন বলে ধারণা দিয়েছে আয়োজক সংশ্লিষ্টরা। বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) ভোর থেকে নগরের রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কের পাশে উত্তম হাজীরহাটের রব্বানীর চরে তিন দিনের এ ইজতেমা শুরু হয়।

ফজরের নামাজের পর আমবয়ান শুরু করে তাবলিগ জামাতের আলেমগণ। কোরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লাহ ও নবী-রাসুলের হুকুম আহকাম মেনে চলার মধ্যেই ইহকাল ও পরকালে সুখ শান্তি রয়েছে বলে উল্লেখ্য করেন তারা।

শীত উপেক্ষা করে বিশাল আয়তনের এ মাঠে দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি শামিয়ানার নিচে অবস্থান নেন। এখানে ১২টি খিত্তার নিচে একসঙ্গে ৫০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। ২০১০ সাল থেকে রংপুরে আঞ্চলিক ইজতেমা হয়ে আসছে। এবার রংপুরে ৬ষ্ঠ বারের মতো ইজতেমা হচ্ছে। 

আয়োজকরা জানিয়েছে, বুধবার (২৪ নভেম্বর) সকাল থেকেই রংপুর জেলাসহ আশপাশের এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ ইজতেমা ময়দানে সমবেত হতে শুরু করেছেন। এখানে রংপুর মহানগর ও সদর উপজেলাসহ তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, গঙ্গাচড়া, মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ, পীরগাছা এবং কাউনিয়া উপজেলার তাবলিগ জামাতের অনুসারীরা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা আসছেন। 

ইজতেমায় বয়ান করতে রাজধানী ঢাকাসহ ইতোমধ্যে সৌদি আরব ও আফ্রিকা থেকে তাবলিগের মুরুব্বিরা ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন। সকাল থেকে স্থানীয় মুরুব্বিরাও বয়ান করছেন। পরবর্তীতে মাশোয়ারার ভিত্তিতে আগত আলেমগণ বয়ানের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াতে উদ্বুদ্ধ করবেন।

ইজতেমায় অংশ নেওয়া বিদেশি মেহমান, মুরব্বি এবং মুসল্লিদের সেবায় ৪ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া দূরের মুসল্লিদের পরিবহন রাখার জন্য গ্যারেজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাঠের আশপাশে শতাধিক খাবারের দোকান বসানো হয়। সহস্রাধিক বাথরুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

এদিকে, ইজতেমা মাঠসহ আশপাশের এলাকাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীরা নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছেন। র‌্যাব, পুলিশ, আনসার, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাসহ পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে চার স্তরের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা রয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরাও।

এছাড়াও ইজতেমা সফল করতে প্রায় চার হাজার স্বেচ্ছাসেবী সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে স্পেশাল স্বেচ্ছাসেবক দল। এবারও ইজতেমায় যৌতুকবিহীন ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক কয়েকজনের বিবাহ সম্পন্ন হবে।

এদিকে, যানবাহন রাখার ব্যবস্থা হিসেবে মাঠসংলগ্নে গ্যারেজ তৈরি করা হয়েছে। রয়েছে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। মুসল্লিদের পয়ঃনিষ্কাশনে শৌচাগার, পাম্প ও ট্যাংকি স্থাপন করে অস্থায়ী গোসলখানা বানানো হয়েছে। এছাড়াও ইজতেমা মাঠের কোল ঘেঁষে থাকা ঘাঘট নদীর পাশাপাশি দুটি পুকুর প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইজতেমা প্রস্তুতি কমিটির সদস্য হাফিজুল ইসলাম হাফিজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইজতেমাতে রংপুর মহানগরীসহ আট উপজেলার মুসল্লিরা অংশ নিচ্ছেন। মাঠে বাঁশের খুঁটিতে টাঙানো পুরো শামিয়ানাটি ওয়াটার প্রুফ। এর নিচে একসঙ্গে ৫০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। এবার ২ লাখের বেশি মানুষের উপস্থিতি ছাড়িয়ে যাবে।

তিনি আরও জানান, ইজতেমা মাঠকে আলোকিত রাখতে বিদ্যুতের লাইন ছাড়াও শতাধিক জেনারেটর বসানো হয়েছে। চিকিৎসা সেবার জন্য সার্বক্ষণিক অর্ধশতাধিক মেডিকেল টিম কাজ করবে মাঠে। এই ইজতেমা শেষে এখান থেকে কয়েক হাজার মানুষ ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে মুসল্লিরা যাবেন।

এদিকে ইজতেমাকে ঘিরে মাঠের আশপাশ ও রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের দুপাশে ব্যবসার পসরা সাজিয়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। যেন তিন দিনের এ আয়োজনকে ঘিরে বদলে গেছে উত্তম হাজীরহাট এলাকা।

নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচলে ট্রাফিক পুলিশসহ স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন। শনিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে ইজতেমার শেষ দিনে বিশেষ মোনাজাত শেষে মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য এখান থেকে কয়েক হাজার মুসল্লি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাবেন।

মেট্রোপলিটন হাজীরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিব বসুনিয়া জানান, ইজতেমায় নিরাপত্তার জন্য কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছে। সাদা পোশাকে আইনশৃংখলাবাহিনীর সদস্যররা সার্বক্ষণিক সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়াও পুলিশের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর