কারও চেয়ে কম নয় মোবারক আলী
জন্ম থেকেই দুই হাতের কব্জি নেই মোবারক আলীর। কিন্তু এতে থেমে থাকেনি তার লেখাপড়া। পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া মোবারক এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
মোবারক আলীর বাড়ি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামে। তার বাবা দিনমজুর এনামুল হক।
বিজ্ঞাপন
ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে মোবারক। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার জন্য পরীক্ষায় তার অতিরিক্ত সময় পাওয়ার নিয়ম থাকলেও অতিরিক্ত সময় লাগে না মোবারক আলীর। অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে সে।
মোবারক আলীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, জন্ম থেকে দুই হাতের কব্জি নেই মোবারক আলীর। তাকে নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তার অভিভাবকরা। বাবা-মায়ের একটা সময় মনে হয়েছিল কী হবে তাকে দিয়ে।
মোবারক আলীর বেড়ে ওঠায় মা মরিয়ম বেগমের চেষ্টার কমতি ছিল না। ছেলের এমন অবস্থায় বিচলিত হলেও ভেঙে পড়েননি তিনি। মায়ের সাহসে ছেলেকে স্কুলমুখি করে দুই হাতের কজ্বি এক করে কলম দিয়ে খাতায় লেখার কৌশল শেখানো হতো তাকে। স্কুলে ভর্তির পর তাকে সহযোগীতা করে অন্যান্য ছাত্ররাও। এভাবে পিএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছে এই মোবারক আলী। ২০১৮ জেএসসি (জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট) পরীক্ষায়ও পেয়েছে জিপিএ-৫।
সবার কাছে মনে হয়েছিল মোবারক আলীর হাত দুটো অচল। তবে মোবারক দেখিয়ে দিয়েছেন প্রতিবন্ধকতা থাকলেও লেখাপড়ায় তাকে দমিয়ে রাখার উপায় নেই। কঠোর পরিশ্রম করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সে।
মোবারক আলীর মা মরিয়ম বেগম জানান, দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে বড় । সে নিজের প্রায় সব কাজই নিজে করতে পারে। ওর ইচ্ছাশক্তি প্রবল। আমরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। তারপরেও তাকে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ।
মোবারক আলী বলেন, হতদরিদ্র পরিবারে আমার জন্ম। কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন ভালো রেজাল্ট করে বাবা-মাসহ শিক্ষকদের মুখ উজ্জ্বল করতে পারি।
কাশিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জায়দুল হক জানান, মোবারক প্রতিবন্ধি হলেও যথেষ্ট মেধাবী এবং পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও পারদর্শী। আমি আশা করছি সে ভালো ফলাফল করবে।
ফুলবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব গোলাম কিবরিয়া জানান, মোবারক আলী অন্য শিক্ষার্থীদের মতোই প্রতিটা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে বাড়তি সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে নির্দিষ্ট সময়েই পরীক্ষার খাতায় লেখা শেষ করছে।
মো. জুয়েল রানা/এনএফ