বাগেরহাট জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল সুপারি। সুপারি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এই জেলা। জেলার কচুয়া বাধাল বাজার জেলার অন্যতম বড় সুপারির হাট। সপ্তাহে দুদিন রোববার ও বৃহস্পতিবার বসে এই হাট। এখানেই প্রতি হাটবারে বিক্রি হয় কোটি টাকার সুপারি।

জেলার চাহিদা মিটিয়ে সুপারি পাইকারি ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুর, সৈয়দপুর, রংপুর, দিনাজপুর, নাটোর, গাইবান্ধাসহ প্রায় ২০টি জেলায় যায় এই সুপারি। এ ছাড়া উপজেলার তালেশ্বর, টেংড়াখালি, গজালিয়া বাজারেও সুপারি বিক্রি হয়। চাহিদা থাকায় ভালো দামও পাচ্ছেন বিক্রেতারা। এভাবে বাজারদর অব্যাহত থাকলে সুপারির চাষিরা লাভবান হবে বলে জানান বিক্রেতারা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২০ সালে জেলায় ৩৭০০ হেক্টর জমিতে সুপারি চাষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা থাকলে চাষ হয়েছিল ৪০৯৭ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছিল ২৫ হাজার ৬০৫ টন সুপারি। ২০২১ সালে ৪০৯৭ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ হাজার ৬০৫ টন। তবে এবার চাষাবাদ হয়েছে ৪ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন ২৫ হাজার ৬৬৩ মেট্রিক টন।

জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে সব থেকে বেশি সুপারি উৎপাদিত হয় কচুয়া উপজেলায়। এই উপজেলায় এ বছর ১ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে ৪ হাজার ১১৪ মেট্রিক টন সুপারি উৎপাদিত হয়েছে।

সরেজমিনে বাধাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভোরের শুরুতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে ভ্যান, নছিমন, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেলে গৃহস্থরা বস্তা বা ঝাকা ভর্তি সুপারি নিয়ে আসছেন হাটে। চলছে দর-কষাকষি। বিক্রিও হচ্ছে খুব। পাইকাররা সুপারি কিনে নিজেদের গদিতে (ভাড়া করা ঘর) স্তূপ করে রাখছেন। এই সুপারি আবার বাছাই ও চূড়ান্ত গণনা করে বস্তা ভর্তি করতে কাজ করেন শতাধিক শ্রমিক।

আবুল কালাম আজাদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, সুপারি হাটের জন্য বিখ্যাত কচুয়ার বাধাল বাজার। বাগেরহাট শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই হাটে লাখ লাখ টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়। তবে খাজনা বেশি দাবি করে তিনি বলেন, সুপারির বস্তাপ্রতি ১০০ টাকার ইজারা নেওয়া হয়। খাজনা যদি একটু কম হয়, তাহলে একদিনে যেমন আমদানি বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।

কচুয়া উপজেলার গোপালপুর থেকে সুপারি বিক্রি করতে আসা চাষি মিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বছর আমাদের সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। সুপারির আকারও অনেক ভালো। পাশাপাশি দামও ভালো পাচ্ছি। সুপারির এমন বাম্পার ফলনে আমরা খুব খুশি।

সুপারি গণনা ও বাছাইকাজে নিয়োজিত শ্রমিক শহিদ, ইউনুস ও মোবারেক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সপ্তাহে দুদিন এই কাজ করার সুযোগ পাই। ফজরের নামাজ আদায় করে হাটে চলে আসি। রাত ১০টার সময় বাড়িতে যাই। এক কুড়ি সুপারি বাছাই শেষে গণনা করে বস্তায় ঢোকালে আমরা পাই ৫ টাকা। প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা আয় হয়। সুপারির মৌসুমে এই কাজ করেই আমাদের সংসার চলে।

বাধাল বাজারের আড়তদার কেয়াম গাজী বলেন, এই হাটে আমরা ৯ জন আড়তদার আছি। প্রতি হাটে দেড় থেকে ২ হাজার বস্তা সুপারি আসে এই বাজারে। এখান বাজার মূল্য বেশ ভালো। গত বছরের তুলনায় এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় সুপারির উৎপাদনও ভালো হয়েছে। এভাবে থাকলে আমরাও লাভবান হব এবং চাষিরাও লাভবান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বেপারি ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাধাল সুপারি হাট থেকে সুপারি কিনে আমরা সরাসরি রংপুরে নিয়ে যাই। রংপুরের আশপাশের জেলায়ও আমরা সুপারি বিক্রি করি। এ বছর সুপারির বাজার ভালো। এক কুড়ি সুপারি কখনো ২৩০ থেকে ৪০০ টাকায় আবার কখনো ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। আশা করি মৌসুমের শেষ পর্যন্ত বাজারদর অব্যাহত থাকলে ব্যবসা ভালো হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বাগেরহাটের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোতাহের হোসেন বলেন, সুপারি ও নারকেলের জন্য বাগেরহাট জেলা প্রসিদ্ধ। এ ছাড়া বর্তমানে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় সুপারি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। এ জন্য আমরাও কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি, যাতে তারা লাভবান হতে পারেন।

এনএ