যদি ঘুমাতে চান ২৮ তারিখ ভোট দিতে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না
যশোরের বাঘারপাড়ার উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী সভায় ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত ১৮ নভেম্বর রাতে ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুরে নির্বাচনী সভায় জহুরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা দ্বীন মোহাম্মদ দিলু পাটোয়ারী এই আতঙ্ক ছড়ানো বক্তব্য দেন। ফেসবুকে এই বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় চলছে নানা আলোচনা ও সমালোচনা।
সভায় সাবেক চেয়ারম্যান দ্বীন মোহাম্মদ দিলু পাটোয়ারী বলেন, কতিপয় বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী বলছে ওমুক মার্কায় ভোট দেব। তারা ভোট দেয়ার সুযোগ পাবে না। এমন জায়গায় চুলকিয়ে দেব, কাউকে দেখাতে পারবে না। হাসপাতালেও চিকিৎসা হবে না। পুলিশের কাছে গিয়েও কাজ হবে না। পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, তারা কি স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেবে?
বিজ্ঞাপন
নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান মিন্টু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন দাবি করে দিলু পাটোয়ারী বলেন, বিএনপি জামায়াতের প্রধান বলেছেন তারা নির্বাচনে যাবেন না। তাহলে আপনারা (বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী) কেন চুলকো-চুলকি করছেন? আমরা কি করতে পারি আপনারা জানেন। ২০১৬ সালে দেখাইছি। আমি চাই না জহুরপুরের কারো ক্ষতি হোক। তাই নৌকার বাইরে যারা ভোট দিতে চান, তাদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই। বাড়িতে ঘুমান ভালো থাকবনে। ভোট দিতে গেলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। ইতিহাসের সাক্ষী হয়েন না।
দিলু পাটোয়ারী আরও বলেন, মাস্টার মনিরুল সাহেব বলেছেন, উত্তর চাঁদপুরে নৌকার মিটিং করা যাবে না। নৌকার মিটিং বন্ধ করতে চাইলে পাছার চামড়া থাকবে না। নকশাল সর্বহারাদের আমি গুনি না। বুড়ো বান্দরদের আপনারা ২৮ তারিখ জবাব দেবেন।
নির্বাচন নিয়ে খেলতে আইসেন না, এমন খেলা খেলে দিবানে যে বাড়িতে ঘুমাতে পারবেন না।
যদি ঘুমাতে চান ২৮ তারিখ ভোট দিতে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। ২৭ তারিখ ব্যাপক ভাঙচুর হবে, ২৮ তারিখের পর ২৯ তারিখও আরও ভাঙচুর হবে। যারা আপনাদের আশস্ত করছে, বদর মোল্লা চেয়ারম্যান হলে আর কেউ কাছে আসতে পারবে না।
দিলু পাটোয়ারী দাবি করেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুব শিগগির হবে। হয়তো এক বছর আগেই ভোট হয়ে যেতে পারে, আমার কাছে ম্যাসেজ আছে। বিএনপি জামায়াতের যারা আমাদের সঙ্গে আছেন, নৌকায় ভোট দেবেন ভালো কথা। কিন্তু অন্য জায়গায় ভোট দেয়ার চিন্তা করলে একেকজনের নামে ১০টা করে মামলা হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দিলু পাটোয়ারী বলেন, আপনারা ভয় পাবেন না। আপনারা কিসের ভয় পান? ওদের কাছে কি আছে? আপনাদের কাছে যা আছে, যদি ওরা দেখে তাহলে ওদের কলিজা শুকিয়ে যাবে। যারা নৌকার বাইরে ভোট দিতে যেতে চায় তাদের নিষেধ করবেন। তারপরও যারা যেতে চায় তাদের তালিকা করবেন।
দিলু পাটোয়ারী আরও বলেন, আমি শুনছি, ওমুক বাড়িতে ৫০টি রামদা এসেছে। রামদা দিয়ে কি করবে? কোথায় লুকাবে? রামদা উল্টো পাছার মধ্যে দিয়ে দেব। রামদা অস্ত্রের ভয় দেখান। ওর কারখানা বহু আগেই করে রেখেছি। কারা কারা অন্য মার্কায় ভোট দিতে চায় তালিকা করেন। এদের এমন শিক্ষা ২৭ তারিখ দেব, যে অন্য গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হবে। মিন্টু চেয়ারম্যান হবে, কীভাবে হবে; ভোটের দিন দেখবেন। নৌকার মিটিং হবে না, এমন কথা বলার সাহস কীভাবে পায় মনিরুল মাস্টার? ওর কলিজা টেনে ছিঁড়ে ফেলব। ওকে দেখা করতে বলেছি, যদি দেখা না করে তাহলে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে পেটাব।
দিলু পাটোয়ারী বলেন, নির্বাচনের পর বদর মোল্লাকে খুঁজেও পাবেন না। ভোটের পর তো সে ঝিনাইদহে পালাবে। যারা অন্য জায়গায় ভোট দিতে চায় তালিকা দেন। কীভাবে বাড়িতে ঘুমায় দেখব। কোন নেতা আর কোন পুলিশ তাদের বাঁচায় আমি দেখব। এদের ঘুম হারাম করে দেব।
সভায় ভয়ভীতি প্রসঙ্গে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা দিলু পাটোয়ারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভয়ভীতি প্রদর্শনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া যেহেতু নির্বাচন বর্জন করেছেন। তাই তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বাচনে আসতে নিরুৎসাহিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, যশোরের বাঘারপাড়ার উপজেলার জহুরপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এবার নৌকা প্রতীকে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করছেন আসাদুজ্জামান মিন্টু। ১৮ নভেম্বর নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামান মিন্টু ও তার লোকজন হুমকি ধামকি ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বদর উদ্দিন মোল্লা।
জাহিদ হাসান/এমএএস