দূর থেকে দেখলে মনে হবে ভবনটি কোনো কোম্পানির কিংবা ব্যক্তিগত কমপ্লেক্স। শপিংমলও মনে হতে পারে। তবে বাস্তবতা হলো এটি গাইবান্ধা জেলার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন। 

ভবনের মূল ফটকে নেই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সাইনবোর্ড কিংবা কোনো নাম। আশপাশে ঘিরে আছে অবৈধ স্থাপনা। কমপ্লেক্সের সামনে বিভিন্ন কোম্পানির সাইনবোর্ড লাগানো। নীতিমালা অনুযায়ী ভবনের দোকানগুলো বীর মুক্তিযোদ্ধা কিংবাতার সন্তানদের ভাড়া দেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। ভাড়া দেওয়া হয়েছে ব্যক্তিগত অফিস, সেলুন, সাংবাদিক এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পদ। আমরা চাই আমাদের সন্তানরা এই প্রতিষ্ঠানের দোকানগুলো ভাড়া নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করুক। কিন্তু তা করা হয়নি। নিচতলার কক্ষগুলো দোকান হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের মধ্যে ভাড়া দেওয়ার কথা থাকলেও নিয়ম অমান্য করে তা দেওয়া হয়েছে বহিরাগতদের। এতে করে সহজ সরল বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের সন্তানরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক শেখ রোহিত হাসান রিন্টু বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝেও সহজ সরল কিংবা অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে যাদের নামে দোকান বরাদ্দ দেওয়া আছে তারাও বীর মুক্তিযোদ্ধা। আমি তাদের সন্তানতুল্য, তাই তাদের কাছে আমার দাবি তারা যেন বহিরাগতদের কাছ থেকে দোকানগুলো নিয়ে অসহায় বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়। আর সাইনবোর্ডের বিষয়ে জেলা প্রশাসক দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের মূল ফটকে অন্য প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড থাকবে এমনটি আশা করিনি। বহিরাগতদের দোকান ভাড়া দেওয়া, তাদের প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড যত্রতত্র লাগানোসহ নানা বিষয়ে আমাদের একটি স্বারকলিপি অল্প কিছু দিনের মধ্যেই জেলা প্রশাসক বরাবর দেওয়ার কথা রয়েছে। 

প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ মান্নান মিয়ার সন্তান জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সহসভাপতি মাহামুদুল ইসলাম মিলন বলেন, আমিও জানতে চাই এটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স কি না। একটি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের মূল ফটকে সাইনবোর্ড থাকবে অন্য প্রতিষ্ঠানের তা আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে মানতে পারি না। মূল ফটকের সামনের সব সাইনবোর্ড সরিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সাইনবোর্ডটি যেন লাগানো হয়। আর সামনের অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি ইস্তিকুর রহমান বলেন, বহিরাগতদের দোকান ভাড়া দেওয়া ও কমপ্লেক্সের মূল ফটকসহ এলোমেলেভাবে সাইনবোর্ড লাগিয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সৌন্দর্য নষ্ট ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা দ্রুত একটি জরুরি সভা করব।

সদর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলী আকবার বলেন, সাইনর্বোডের বিষয় এতদিন আমি খেয়াল করিনি। আপনার কাছ থেকে জানতে পারলাম। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবো।

জেলার মুক্তিযোদ্ধার ডেপুটি কমান্ডার ওয়াসিকার মোহাম্মদ ইকবাল (মাজুু) মুঠোফোনে জানান, মুক্তিযোদ্ধা ভবনের দোকানগুলো মূলত মুক্তিযোদ্ধারাই নিয়েছেন। তারা যে কাউকে এই দোকান ঘর ভাড়া দিতে পারেন। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা এই ঘরগুলো ভাড়া পেতে পারে। 

সাইনবোর্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, আগে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের মূল ফটকে সাইনর্বোড ছিল, সেটি নষ্ট হয়ে ভেঙে পড়েছে। পরবর্তীতে সেই সাইনবোর্ডটি আর লাগানো হয়নি। দোকান ঘর ভাড়া দেওয়ার সময় আমরা প্রতেক ভাড়াটিয়াকে বলেছি, মুক্তিযোদ্ধা ভবনের মূল ফটকে কোনো দোকান বা অফিসের সাইনবোর্ড যেন না লাগানো হয়। কিন্তু বাধা অমান্য করে রাতের আধারে তারা নিজ নিজ দোকান বা অফিসের সাইনবোর্ড ভবনের মূল ফটকে লাগিয়ে দিয়েছে। শুধু তাই না ঘর ভাড়া নেওয়া সময় বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার কথা থাকলেও তারা বিল দেয় না। অবৈধ স্থাপনাগুলো সড়ক বিভাগের দেখার কথা থাকলেও তারা তা দেখেন না। কমপ্লেক্সের সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে তিনি দ্রুত জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান তিনি।

রিপন আকন্দ/এসপি