কাজিরহাট-আরিচা রুট ট্রাক শ্রমিকদের গলার কাঁটা
পাবনার কাজিরহাট-আরিচা রুটে যানবাহন পারাপারে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। চারটি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করলেও বড় ফেরি না থাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এখান থেকে দুটি বড় ফেরি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। এতে দুই পাড়ে আটকা পড়েছে ৫ শতাধিক যানবাহন। ৫ কিলোমিটারজুড়ে রয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি।
শনিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে কাজিরহাট ঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ৩০ অক্টোবর ঘাটের পন্টুন ভেঙে যাওয়ায় দুইপাড়ে আটকা পড়ে শতশত যানবাহন। তখন কর্তৃপক্ষ বেগম রোকেয়া ও সুফিয়া কামাল ফেরি দিলে ঘাট মোটামুটি সচল হয়।
বিজ্ঞাপন
এরপর এই দুটি বড় ফেরি এখান থেকে অন্য ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমানে শাহ মখদুম, ফেরি কপোতি, ক্যামেলিয়া, ফেরি ফরিদপুর ঘাটে অবস্থান করলেও মূলত এগুলো দিয়ে বেশি ট্রাক বা বড় যানবাহন পারাপার করা যায় না। সবকটি ফেরিতে মাত্র ৪/৫ টি করে যানবাহন পারাপার করা যায় বলে জানান তিনি।
সরেজমিনে কাজিরহাট ঘাটে দেখা গেছে, ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন যানবাহন শ্রমিকরা। দূরপাল্লার যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ট্রাক টার্মিনাল, আবাসিক হোটেল, পাবলিক টয়লেট, যাত্রীছাউনি ও লাইটিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় ট্রাকচালকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সব মিলিয়ে ঘাট হয়েছে ট্রাক শ্রমিকদের গলার কাঁটা।
যাত্রী ও যানবাহনের চালকেরা অভিযোগ করেন, এই নৌপথে কমপক্ষে ৮ ফেরির প্রয়োজন। ৪টি ফেরি দিয়ে যানজট কমাতে পারবে না। আজ ৭ দিন ধরে ঘাটে ব্যাপক যানবাহনের চাপ থাকলেও এখান থেকে বড় ফেরি দুটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও বিআইডব্লিউটিসির নাম প্রকাশে একাধিক কর্মী জানান, এই ঘাটে যতটি ফেরি দেওয়া হয়েছে সবই পুরোনো ও ত্রুটিযুক্ত। দু-একদিন পরই ফেরিতে যান্ত্রিক ক্রুটি দেখা দেয়।
কাজিরহাট ঘাটে কথা হয় মেহেরপুর থেকে আগত আলমাছ মিয়া নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আজ ৩ দিন ধরে ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছি। সিরিয়াল পাওয়া তো দূরের কথা। আরও চার-পাঁচদিন ঘাটে অবস্থান করা লাগতে পারে। একটি ফেরিতে ৩-৪টি করে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছেন আরিফুল ইসলাম নামের এক ট্রাকচালক। তিনি বলেন, দিনের পর দিন এখানে অবস্থান করলেও ঠিকমতো ফেরির দেখা পাইনি। এখানে আবাসিক হোটেল, বাথরুম, টার্মিনাল নেই। নিরাপত্তার জন্য একটি লাইটও লাগানো নেই। সব সময় চুরি-ডাকাতির ভয় থাকে। ডাকাতির ভয়ে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না।
পাবনা শহর থেকে আগত পণ্যবাহী ট্রাকচালক রিপন উদ্দিন তিনি বলেন, মহাজনের সঙ্গে পণ্য নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেই। বঙ্গবন্ধু সেতুতে যানজট থাকবে বলে কাজিরহাট ফেরিঘাটে আসলে এখানে শতশত যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। দুইদিন অবস্থান করেও ফেরির দেখা না পেয়ে বাধ্য হয়েই বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুুতি নিচ্ছি।
আমিনপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলম বলেন, পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের নিরাপত্তায় সারারাত পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে। ডাকাতি বা অর্থ চুরি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান তিনি। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে।
বিআইডব্লিউটিসির কাজিরহাট ঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, মাত্র কয়েকটি ফেরি দিয়ে এই নৌপথ পরিচালনা করা যাচ্ছে না। যেভাবে কাজিরহাট ঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে, তাতে প্রতিদিন ফেরিগুলোর ৩৫ থেকে ৪০টি ট্রিপের প্রয়োজন।
রাকিব হাসনাত/এমএসআর