সরকার গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে
ডিজেল, কেরোসিন ও তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের বাম সংগঠনের নেতারা। সোমবার (৮ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে শহর চৌরাস্তায় প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর ব্যানারে এক প্রতিবাদ সমাবেশে মন্তব্য করেন বাম নেতারা।
প্রতিবাদ সমাবেশে নেতৃত্ব দেন জেলা জেএসডি ও ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী, জেলা জাসদের সহসভাপতি খাদেমুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সত্য প্রসাদ ঘোষ নন্দন, জেলা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন শান্তি, সদর উপজেলা ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি আনোয়ার চৌধুরী, সদর উপজেলা সিপিবির সভাপতি আহসানুল হাবিব বাবু, সদর উপজেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক গোলাম সারোয়ার সম্রাট বাংলাদেশ সাম্যবাদী আন্দোলনের সংগঠক মাহাবুব আলম রুবেল প্রমুখ।
বিজ্ঞাপন
বক্তারা বলেন, করোনা মহামারিতে দেশের মানুষের আয় কমেছে। অসংখ্য মানুষ কাজ হারিয়ে বেকারত্বের বোঝা বহন করছে। ব্র্যাক এবং পিপিআরসির জরিপে প্রকাশিত জরিপে, নতুন করে ৩ কোটি ২৪ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে।
চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অসহনীয় মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের জনগণ যখন দিশেহারা, তখন সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়েছে। বরাবরের মতোই আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধিকে অজুহাত হিসেবে দেখানো হয়েছে।
বাংলাদেশে বছরে মোট যে জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, তার ৭৩ শতাংশই ডিজেল। সড়ক ও নৌপরিবহন, সেচপাম্প এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অনেক ক্ষেত্রেই ডিজেলের ব্যবহার হয়। ফলে যানবাহনের ভাড়া বাড়ানো হলো ২৭ শতাংশ। কৃষিপণ্য উৎপাদনে খরচ বাড়বে, বিদ্যুতের মূল্যও আবারও বাড়বে। পণ্য পরিবহনের খরচ বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দামও বাড়বে। ফলে জীবনযাপনের ব্যয় আরও বাড়বে। জনগণের জীবন হয়ে উঠবে দুঃসহ। তাই সরকারের এই সিদ্ধান্ত জনস্বার্থবিরোধী।
তারা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে ডিজেল, কোরোসিন, ফার্নেস অয়েল, এলপিজির দাম বাড়ানোর কথা সরকার বলছে। অথচ ২০১৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম কম থাকার পরও দেশে দাম কমায়নি। এর মাধ্যমে বিপিসি ৭ বছর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সেই টাকা বর্তমান লোকসান সমন্বয়ে করলে এবং প্রতি লিটার ডিজেলে সরকার ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ ১৭ টাকার বেশি নেয়টা বাদ দিলেই বিপিসিকে আর লোকসান দিতে হয় না। সাধারণ মানুষকেও মূল্যবৃদ্ধির চাপে পড়তে হয় না।
বিএডিসির হিসাবমতে দেশে ১৩ লাখ ৭৯ হাজার সেচ পাম্প রয়েছে। তার মধ্যে ১১ লাখ ৯২ হাজার ডিজেল চালিত। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সেচ খরচ বিঘাতে ৩০০ টাকা বেড়ে গিয়ে, উৎপাদন খরচ বাড়বে; পণ্য পরিবহন ব্যয় বাড়বে। অথচ কৃষক এমনিতেই ফসলের লাভজনক দাম পান না, তার ওপর ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলে আরও লোকসানে পড়ে যাবে।
বক্তরা বলেন, সরকার গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার পর্যন্ত হরণ করেছে। এ অবস্থায় মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদসহ সরকারের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া আর কোনো পথ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা।
এনএ