চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষা অর্জনে দেশের অন্যতম সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজে শিক্ষক সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। দীর্ঘ দিন ধরে প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষকের পদশূন্য পড়ে থাকলেও তা পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষক সংকটে লেখাপড়া মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সঠিকভাবে শিখতে পারছেন না তারা।

কলেজ প্রশাসন জানিয়েছে, ২২৩ পদের বিপরীতে ৯৮ জন কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে ২৬ জন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি হিসেবে যুক্ত ছিলেন, তাদের এবং একজনকে প্রেষণে যুক্ত করা হয় এখানে। তারপরও ১২৫টি পদে কোনো শিক্ষক নেই। ফলে এই কলেজে লেখাপড়া করা ডাক্তারদের জানা-শোনার মান নিয়েও প্রশ্ন ওঠছে।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ৩৬ অধ্যাপক পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র একজন। মন্ত্রণালয়ে ওএসডি থাকা দুইজন অধ্যাপককে এখানে নিয়োগ দেওয়ার ফলে সংখ্যাটা এখন তিন। শূন্য পদের সংখ্যা ৩৩ জন। ৫০ জন সহযোগী অধ্যাপকের মধ্যে রয়েছেন ১৩ জন। মন্ত্রণালয়ে ওএসডি থাকা ছয়জনকে এখানে সংযুক্ত করা হয়। শূন্য ৩৭টি সহযোগী অধ্যাপক পদের বিপরীতে কেউ নেই। ৮০ জন সহকারী অধ্যাপক পদে ৪৬ জন কর্মরত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৮ জন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি হিসেবে যুক্ত। তারপরও শূন্য পদের সংখ্যা ৩৪। ৪৪টি প্রভাষক পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ২৮ জন। এর মধ্যে একজন প্রেষণে যুক্ত। ছয়জন মেডিকেল কর্মকর্তা পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন দুইজন। আর বায়োকেমিস্টের একটি পদ শূন্য রয়েছে।

কলেজ থেকে জানানো হয়েছে, ভাইরোলজি, শিশু হেমাটিজি ও অনকোলজি, ক্লিনিক্যাল নিউরো সার্জারি, অর্থোপ্লাস্ট, অর্থোপেডিক ও ট্রমাটোলজি, স্পাইন সার্জারি, জেনারেল রেডিওলজি, নিউরো রেডিওলজি, রক্ত পরিসঞ্চালন, নিউরো সার্জারি এবং রিউমাটোলজি বিভাগগুলোতে কোনো শিক্ষক নেই।

এছাড়া ফিজিওলজি, ফরেনসিক মেডিসিন, মাইক্রো বায়োলজি, কমিউনিটি মেডিসিন, ফিজিক্যাল মেডিসিন, নেফ্রোলজি, প্যাথলজি, নিউওরো মেডিসিন, অর্থোপেডিক, নাক-কান-গলা, রেডিও থেরাপি, ইউরোলজি, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিক, নিউনোটলজি ও রিউমাটোলজি বিভাগে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের পদগুলোও শূন্য।

পাশাপাশি রেসপিরেটরি মেডিসিন, হেপাটলজি, রেডিওথেরাপি, এনসথেসিওলজি, রেডিওলজি ও ইমেজিং, চক্ষু, স্পোর্টস মেডিসিন ও অর্থোসকপি, অর্থোপেডিক, সার্জারি, ফার্মাকোলজি ও বায়োকেমেস্ট্রিসহ আরও কয়েকটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের পদ দীর্ঘ দিন থেকে শূন্য পড়ে রয়েছে।

কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মাত্র একজন সহকারী অধ্যাপক ও একজন মেডিকেল কর্মকর্তা পুরো বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ এখানে অনুমোদিত পদ রয়েছে সাতটি। মাইক্রোবায়োলজি ও কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগেও মাত্র একজন করে সহকারী অধ্যাপক। মেডিসিন বিভাগে তিনজন অধ্যাপকের পদই শূন্য। সহযোগী অধ্যাপকের পাঁচটি পদে রয়েছেন মাত্র একজন। সহকারী অধ্যাপকেরও তিনটি পদ শূন্য। শিশু বিভাগের তিনটি সহযোগী অধ্যাপকের পদেও কোনো জনবল নেই।

নেফ্রোলজি বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের তিনটি পদের বিপরীতে একজন সহকারী অধ্যাপক কর্মরত রয়েছেন। সাইকিয়াট্রিক বিভাগে একজন সহকারী অধ্যাপক আছেন। গাইনি বিভাগের দুটি অধ্যাপক পদই শূন্য। তিনটি সহযোগী অধ্যাপকের পদে রয়েছেন একজন। সহকারী অধ্যাপকের পাঁচটি পদে কর্মরত রয়েছেন তিনজন।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মুনিরুজ্জামান শাহিন জানান, প্রতি মাসেই মেডিকেল কলেজের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়। মন্ত্রণালয় শিক্ষক সংকটের বিষয় জানেন। এই কলেজে ১-২ বছরে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়নি। বলতে পারেন ৫-৭ বছর আগে থেকেই শিক্ষক সংকটের শুরু হয়। করোনায় ১৯ মাস ক্লাস বন্ধ ছিল। এই সময়ে অনেক শিক্ষক অবসরে গেছেন। ফলে সংকট আরও প্রকট হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শুধু শিক্ষক নয়, কর্মচারীর সংকটও রয়েছে। কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া আমরা চালাচ্ছি। তবে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। চাইলেই ২-১ বছরের মধ্যে তা পূরণ হবে বলে মনে হয় না। যদিও আমরা আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষক সংকট দূর হবে।

এসপি