যশোর কারাগারে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর নিয়ে তোলপাড়
‘আপিল নিষ্পত্তির আগেই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে’, এমন খবরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর যশোর কারাগারে চুয়াডাঙ্গা জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার মেম্বার হত্যা মামলায় দুই আসামি পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক নেতা মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
যদিও আজ বুধবার (৩ নভেম্বর) আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির জন্য কার্যতালিকার ১১ নম্বর ক্রমিকে ছিল ওই দুইজনের আপিল মামলাটি। দীর্ঘদিন পর আপিল মামলাটি কার্যতালিকায় আসায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির বিচারপ্রার্থী পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি জানত পারেন, ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর তাদের ফাঁসি কার্যকর হয়ে গেছে!
বিজ্ঞাপন
এই আইনজীবীর দাবি, মোকিম ও ঝড়ুর পরিবার খুবই দরিদ্র। তাই তাদের পরিবারের সদস্যরা সেভাবে মামলার খোঁজ নিতে পারেননি।
এদিকে যশোরের কারা সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দাবি করেছে, আইনগত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পরই মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, আপিল বিভাগে এই দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। এরপর দুই আসামি মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে মৃত্যুদণ্ড মওকুফের আবেদনও করেন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এই আবেদন নামঞ্জুর করেন। ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সহকারী সচিব মোহাম্মদ আলী স্বাক্ষরিত এক পত্রে আবেদন নামঞ্জুরের বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এরপর আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ১৬ নভেম্বর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেনকে ১৯৯৪ সালের ২৮ জুন গ্রামের বাদল সর্দারের বাড়িতে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির কতিপয় চরমপন্থী কুপিয়ে হত্যা করে। ওই দিনই নিহতের ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা অহিম উদ্দীন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০০৮ সালের ১৭ এপ্রিল এ হত্যা মামলার রায় ঘোষিত হয়। রায়ে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির দুই আঞ্চলিক নেতা দুর্লভপুরের মৃত মুরাদ আলীর ছেলে আব্দুল মোকিম ও একই গ্রামের মৃত আকছেদ আলীর ছেলে ঝড়ুসহ তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং দুর্লভপুরের মৃত কুদরত আলীর ছেলে আমিরুল ইসলাম ও একই গ্রামের আবু বক্করের ছেলে হিয়াসহ দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। বাকি ১৬ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।
মামলার রায় ঘোষণার পর উচ্চ আদালতে আপিল সূত্রে ফাঁসির দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এক আসামি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুজন আসামি আমিরুল ইসলাম ও হিয়ার দণ্ডাদেশ মওকুফ করা হয়। মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসির আদেশ বহাল থাকে। এরপর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর রাত পৌনে ১২টায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মোকিম ও ঝড়ুর ফাঁসি কার্যকর হয়।
খুলনা বিভাগীয় কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি, প্রিজন) মো. ছগির মিয়া জানান, আপিল নিষ্পত্তির আগেই যশোর কারাগারে ২০১৭ সালে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর, এমন খবর তাদের নজরেও এসেছে। কারা কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র ও ফাইল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে।
জাহিদ হাসান/এনএ