সবজির ভালো ফলনে ১৫ লাখ টাকা আয়ের আশা আয়নালের
সবজিতে ভরপুর জেলা মানিকগঞ্জ। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ জেলার সবজিচাষিরা। গেল বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে বিভিন্ন ধরনের সবজির পরিচর্যা ও ফলনে ব্যস্ত তারা। উৎকৃষ্ট ফলন আর ভালো বাজারদর পেলে এবার সবজি চাষে লাভবান হওয়ার আশা করছেন জেলার সবজিচাষিরা।
মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলায় কমবেশি সবজির আবাদ হয়ে থাকে। তবে সিংগাইর, সাটুরিয়া ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সবজির আবাদ হয়ে থাকে। রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় এ জেলার সবজির চাহিদা রয়েছে অনেক। এ কারণে প্রতিবছর জমি থেকে বন্যার পানি নামার পরপরই শুরু হয় শীতকালীন আগাম সবজি চাষ।
বিজ্ঞাপন
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, চলতি বছর বন্যার পানি নামার পরপরই জেলার কৃষকরা শীতকালীন আগাম সবজি চাষাবাদ শুরু করেছেন। এ বছর জেলায় ৮ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৩০০ হেক্টরের বেশি জমিতে সবজির আবাদ করেছেন কৃষকরা। তবে সবজির আবাদ পর্যায়ক্রমে আরও বাড়বে। আবহাওয়া অনুকূল, ভালো ফলন ও বাজারদর ভালো পেলে এ বছর চাষিরা লাভবান হবেন অপেক্ষা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে সাটুরিয়া উপজেলায় দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠে শীতকালীন সবজি আবাদে ব্যস্ত রয়েছেন সবজিচাষিরা। অনেকে জমি থেকে উৎপাদিত ফলন তুলছেন আবার অনেকে সবজিক্ষেতের পরিচর্যা করছেন। অনেক কৃষককে বিভিন্ন কৃষি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে জমিতে রোপণ করা সবজিক্ষেতের আগাছা, জমির মাটির উপরিভাগ আলগা করা, জমিতে কীটনাশক দিতে দেখা গেছে।
সাটুরিয়া উপজেলার রাইল্যা গ্রামের কৃষক আইনাল আলাপকালে ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার বন্যায় আমার বেশ কিছু ক্ষতি হয়েছে। তিন থেকে চার বিঘা জমির লাউ বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর আবার জাঙলা বানিয়ে সেখানে আগাম শীতকালীন সবজির আবাদ করেছি।
তিনি আরও বলেন, এ বছর সাত থেকে আট বিঘা জমিতে শিম, লাউ, কপি চাষাবাদে জমি তৈরি থেকে শুরু করে বীজ-চারা রোপণ, সার-কীটনাশক এবং শ্রমিকে মজুরি নিয়ে প্রায় চার লাখ টাকার মতো ব্যয় করেছি। এবার আবহাওয়াও ভালো আছে। সবজির গাছও ভালো হয়েছে। বাজারদার ভালো পেলে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারব। এ বছর প্রায় ১৫ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করার টার্গেট করেছি বলে জানান এই কৃষক।
উপজেলার জান্না গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলামকে তার সবজিক্ষেত থেকে শসা তুলতে ব্যস্ত দেখা যায়। তিনি বলেন, এ বছর ১২০ শতাংশ জমিতে শসা ও করোলা এবং এক বিঘায় কপির আবাদ করেছি। এতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার টাকার মতো। কেবল ২০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছি।
আরেক সবজিচাষি জসিম মিয়া বলেন, এবার ৩০ শতাংশ জমিতে লাউ, শিম ও শসার আবাদ করছি। এতে খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা আর এ পর্যন্ত ৩৫ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি। প্রতিবছরের মতো এবারও সবজি চাষে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন এই কৃষক।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. শাহজাহান আলী বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলতি মৌসুমে মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলায় কমবেশি সবজির আবাদ করেছেন কৃষকরা। তবে জেলার সিংগাইর, সাটুরিয়া এবং সদর উপজেলায় রবিশস্যের বেশি আবাদ হয়।
তিনি আরও বলেন, এ বছর জেলায় ৮ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩ হাজার ৩০০ হেক্টরের বেশি জমিতে সবজির আবাদ করেছেন জেলার কৃষকরা। তবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রর চেয়ে বেশি সবজির আবাদ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এনএ