পদ্মাপারের ভাঙনে দেখা দিয়েছে জটিলতা

গত কয়েক বছরে সর্বনাশা পদ্মার ভাঙনে তলিয়ে গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার পাকা, দুর্লভপুর ও উজিরপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম। নদীভাঙনের ফলে এক ইউনিয়নের সঙ্গে অন্য ইউনিয়নের সীমানা নির্ধারণে দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা।

বর্তমানে পরিস্থিতি এমন যে একটি ইউনিয়নের ওয়ার্ডের প্রায় অর্ধেক মানুষই বসবাস করছেন অন্য ইউনিয়নে। নদীভাঙনকবলিত পদ্মাপারের এসব সংগ্রামী মানুষের বসবাসে কোনো সমস্যা বা আপত্তি না থাকলেও জটিলতা দেখা দিয়েছে নির্বাচনী এলাকা নিয়ে।

অন্যদিকে সম্ভাব্য মার্চ-এপ্রিলে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। তাই বিষয়টি নিয়ে নির্বাচনী সীমানা নিষ্পত্তির আবেদন করেছেন একজন ইউপি সদস্য। শিবগঞ্জ উপজেলার উজিরপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম এর সমাধান চেয়ে গত মঙ্গলবার (২০ জানুয়ারি) আবেদন করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর।

প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত নির্বাচন না দেওয়ার দাবি ইউপি সদস্যের। এ ছাড়া অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, চিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর অনুলিপি দিয়েছেন তিনি।

উজিরপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য মো. রফিকুল ইসলামের বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো আবেদন সূত্রে জানা যায়, ২৬ হাজার জনসংখ্যা নিয়ে উজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদটি সমৃদ্ধ জনপদ ছিল। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত চলমান পদ্মা নদীর ভাঙনের ফলে উজিরপুর, পাকা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নের বিশাল অংশের ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হয়। নদীভাঙনের ফলে শুধু উজিরপুর ইউনিয়নের তিন-চতুর্থাংশ ফসলি জমি ও ৫০ শতাংশ বাসিন্দা পার্শ্ববর্তী পাকা, দুর্লভপুর ও ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বসবাস শুরু করে।

বিরোধপূর্ণ সীমানা নিয়ে একটি আবেদন পাওয়া গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় সীমানা জটিলতা নিরসনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মোতাওয়াক্কিল রহমান, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা

তিনি আরও জানান, বিধ্বংসী নদীভাঙনের ফলে সীমানা বিলুপ্তি হয়ে বর্তমানে পাকা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড, দুর্লভপুর ইউনিয়নের ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ড এবং ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের ৬, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানা অনিশ্চিত ও বিরোধপূর্ণ রয়েছে। বর্তমানে তারা আগের ওয়ার্ডের ভোটার। নতুন করে আশ্রয় নেওয়া এসব ওয়ার্ডের ভোটার তালিকায় তাদের নাম নেই। সীমানা বিরোধ থাকার কারণে উজিরপুর ইউনিয়নের ভোটারদের নাম হালনাগাদ ভোটার তালিকা থেকেও বাদ পড়েছে। সীমানা বিরোধ থাকায় ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই এলাকার জনসাধারণ।

এসব এলাকার সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি হলে নাগরিকরা তাদের সাংবিধানিক অধিকার ফিরে পাবেন এবং ঘোড়াপাখিয়া ও ছত্রাজিতপুর ইউনিয়নের অনেক দিনের সীমানা বিরোধ থেকে মুক্তি পাবে। সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না করার আহ্বান জানান ইউপি সদস্য রফিকুল ইসলাম।

এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোতাওয়াক্কিল রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, বিরোধপূর্ণ সীমানা নিয়ে একটি আবেদন পাওয়া গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় সীমানা জটিলতা নিরসনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এনএ