‘হিডের (পিঠ) চামড়া খুলি আমি আঁকি লবণ-মরিচ লাগামু, আমনের (আপনার) ছেলেরে আমি আঁকি লবণ-মরিচ দিমু।’ এভাবেই আবদুর রহিম নামে এক রিকশাচালককে হুমকি দিয়েছেন লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল করিম নিশান। পুলিশ ও সাংবাদিকদের সামনেই তিনি আবদুর রহিমকে হুমকি দেন। 

মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) দুপুরে এ ঘটনার ৪ মিনিট ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের দক্ষিণ মজুপুর এলাকার বাসিন্দা ইলিয়াসসহ কয়েকজন যুবক রিকশাচালক আবদুর রহিমের ছেলে আবুল কাশেমের কাছ থেকে প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা পাওনা। ছেলে টাকা না দেওয়ায় শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) ইলিয়াসসহ কয়েকজন এসে আবদুর রহিমের ঘরের টিনের চালা খুলে নিয়ে যায়। পরে এ ঘটনায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সোমবার (১ নভেম্বর) জেলা পুলিশের উদ্যোগে টিনের চালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে পুলিশ ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনেই রিকশাচালককে হুমকি দেন ছাত্রলীগ নেতা নিশান। 

ঘটনার সময় লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (তদন্ত) এমদাদুল হক, উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কাওছারুজ্জামান, সদর থানার এসআই ওয়াদুদ উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় উত্তেজিত হয়ে জিয়াউল করিম নিশান বলেন, তাদেরকে টাইম দেওয়া হয়েছে। তারা সেটা না মানায় পাওনাদাররা তাদের ঘরের চালের টিন খুলে নিয়েছে। ঘটনার দুদিন পরই আমি তাদের ঘরের চালের টিন লাগিয়ে ফেলতে বলেছি। কিন্তু তারা তা না মেনে পুলিশ ও সাংবাদিক এনে চালের টিন লাগাচ্ছে। 

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখানে সাংবাদিকগিরি করতে এসেছেন। আমার ইতিহাস জেনে নেবেন। আমি রিকশাচালক দেখলে মাথা নিচু করে হেঁটে চলে যাওয়ার মানুষ। আবার বিএনপি নেতা এ্যানি চৌধুরীর বাসায় একা ৭-৮ জনকে মারধরও করি। উপস্থিত দুইজন প্রতিবেশি তাকে শান্ত করার চেষ্টা করলে তাদেরকেও গালমন্দ করে দেখে নেয়ার হুমকি দেন তিনি।

ভুক্তভোগী আবদুর রহিম লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের দক্ষিণ মজুপুর এলাকার ইসহাক বেপারী বাড়ির বাসিন্দা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বসতঘরের টিনের চালা খুলে নেওয়ায় আবদুর রহিম পরিবার নিয়ে তিন দিন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করেন। গত রোববার (৩১ অক্টোবর) এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন করা হয়। সংবাদটি পুলিশ সুপার ড. এএইচএম কামরুজ্জামানের নজরে পড়লে তিনি ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে সদর থানা পুলিশকে নির্দেশ দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পায়।

পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে ওই রিকশাচালকের ঘরের চালের টিন লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়।  পুলিশ সুপার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় সোমবার (১ নভেম্বর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এমদাদুল হকের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা রিকশাচালকের বসতঘরের চালের টিন লাগিয়ে দেন। সন্ধ্যায় এ ঘটনায় আবদুর রহিম বাদী হয়ে অভিযুক্ত ইলিয়াসকে প্রধান করে ছয়জনের বিরুদ্ধে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেন। তবে এর আগে সালিসি বৈঠকে উপস্থিত থাকা ও হুমকিদাতা ছাত্রলীগ নেতা জিয়াউল করিম নিশানের নাম মামলায় উল্লেখ করা হয়নি। 

লক্ষ্মীপুর শহর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (তদন্ত) এমদাদুল হক বলেন, মামলার পরে অভিযান চালিয়ে প্রধান অভিযুক্ত ইলিয়াসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। ইলিয়াস দক্ষিণ মজুপুর এলাকার মো. সিরাজের ছেলে।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ নেতা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তাকে আমরা বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। রিকশাচালকও তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনেনি। অভিযোগ পেলে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। 

হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর