পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের কাঁঠালপাড়া গ্রামের স্লুইসের ভেতরে ও স্লুইস-সংলগ্ন কচুপাত্রা নদীতে বড়শি ফেলে মাছ শিকারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন শতাধিক জেলে। বর্তমানে নদীতে মাছ কম থাকায় কোনোমতে খেয়ে না-খেয়ে চলছে তাদের সংসার। ফলে অনেক জেলেই পরিবর্তন করছেন পেশা। সংকটে পড়ে তারা সহায়তার দাবি জানিয়েছেন মৎস্য বিভাগের কাছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই স্লুইসের কচুপাত্রা নদীতে সারিবদ্ধভাবে রাখা আছে ছোট ছোট ডিঙি নৌকা। একটি নৌকায় এক-দুজন জেলে একটি চিকন লাঠির মাথায় সুতা বেঁধে তৈরি করেছেন বড়শি। নদীতে এ রকমের তিন-চারটা বড়শি ফেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন তারা মাছের আশায়। কারও বড়শিতে ছোট ছোট চিংড়ি, গুলসা, বগনি, কোড়াল, গাগড়া, পাঙাশ, রুই, কাউন, পোয়া, বাইলা ও কাঁকড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা দিচ্ছে। অনেকে আবার বড় সাইজেরও মাছ পাচ্ছেন।

এসব মাছ পার্শ্ববর্তী কলাপাড়া বাজারে নিয়ে বিক্রি করছেন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে। তবে বেশির ভাগ জেলেই ফিরছেন খালি হাতে। এভাবে দিনের পর দিন মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ইতোমধ্যে অনেক জেলেই তাদের পেশার পরিবর্তন করেছেন। তাই এ নদীতে বড়শি দিয়ে মাছশিকারি জেলেরা জেলে কার্ডসহ সরকারি ভাতার দাবি জানিয়েছেন।

কাঁঠালপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৎস্যজীবী আবদুল হামিদ সরদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, বয়স হয়ে গেছে। তাই নদীতে মাছ শিকার করতে পারি না আগের মতো। তিন বছর ধরে এখানে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করছি। এক কেজি মাছ পেলে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বেচতে পারি। তিনি আরও বলেন, গত বছর মৎস্য কর্মকর্তা এসে নাম নিয়ে গেছেন। এখন পর্যন্ত জেলে কার্ড পাইনি।

মাছ শিকারে আসা প্রতিবন্ধী (দুটি পা নেই) জালাল ফকির বলেন, সংসার চালাতে নৌকায় বসে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করছি। অন্য কোনো কাজ করতে পারি না। সকাল হলে কড়ইবাড়িয়া থেকে আমার স্ত্রী নৌকায় উঠিয়ে দেয়, আবার বাড়িতে গেলে তুলে নেয়। এত কষ্ট করেও নদীতে তেমন মাছ না থকায় মাছও বেশি একটা ধরতে পারছি না।

কাঁঠালপাড়া গ্রামের রিকশাচালক ছলেম উদ্দিন জানান, দুই বছর আগে তিনি নিজেও মাছ শিকার করতেন। তখন বড় বড় মাছ ধরা পড়ত। এখন আর তেমন মাছ নাই। তাই এ পেশা ছেড়ে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

নীলগঞ্জ ইউনিয়নের চা-দোকানি রাজ্জাক মিয়া জানান, ওই নদীতে বড়শি দিয়ে মাছ শিকার করে তিনি তিন বছর আগেও পরিবারের পাঁচ সদস্যের ভরণপোষণ চালাতেন। কিন্তু বছরখানেক আগে মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় তিনি বর্তমানে চায়ের দোকান দিয়েছেন।

চাকামইয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির কেরামত হাওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ইউনিয়নে এসব মৎস্যজীবীর সম্পর্কে আমি অবগত আছি। সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা এলে তাদের প্রদান করা হবে।

কলাপাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, সমাজসেবা অধিদফতর থেকে বর্তমানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী (কাঁসারি, বাঁশ ও বেতশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত, কামার, কুমার, তাঁতী, নাপিত, বাউলশিল্পী) ১০টি পেশার মানুষের জরিপ চলছে। তাদের মধ্যে এসব পেশার মানুষকেও তালিকাভুক্ত করা হবে।

কলাপাড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, তাদের জেলে কার্ড করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সরকারি কোনো বরাদ্দ এলে তাদের সহয়তা করা হবে।

এনএ