ধামরাইয়ে কোণঠাসা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা
দ্বিতীয় ধাপে ঢাকার ধামরাইয়ে শুরু হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনী আমেজ। আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা রীতিমতো সড়ক, বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সেঁটে দিয়েছেন পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন। এই নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাও কম নয়।
তবে তাদের পোস্টার ব্যানার, ফেস্টুন ততটা চোখে পড়ে না। কোনো ধরনের ব্যানার, ফেস্টুন লাগাতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। তাদের দাবি, নেতা-কর্মী-সমর্থকরা তাদের পোস্টার নিয়ে বের হলেই হামলার শিকার হচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
ধামরাই উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে আগামী ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন। এদিকে লক্ষ্য রেখে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা। উপজেলায় মোট ৫৭ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী থাকলেও ভোটারদের দ্বারে ভিড়তে পারছেন না বেশির ভাগ প্রার্থীই। আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের হুমকি, মারধর ও হামলায় প্রায় কোণঠাসা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। তবে তাদের বিশ্বাস, শিগগিরই তৈরি হবে নির্বাচনী পরিবেশ।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, ধামরাই উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪২ জন প্রার্থী। ইউপি সদস্য হিসেবে নির্বাচন করছেন ১৫টি ইউনিয়নে ৬৮৮ জন। ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে সুয়াপুর ইউনিয়ন, সোমভাগ, রোয়াইলসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইতোমধ্যে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রায় ৩৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন সুয়াপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হাফিজুর রহমান সোহরাব, সোমভাগ ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আওলাদ হোসেন। এ ছাড়া রোয়াইল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন মুহাম্মদ মিন্টুর বাড়িতে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকরা।
রোয়াইল ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শামসুদ্দিন মিন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমিও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। বর্তমানেও আওয়ামী লীগ মনোনীত ও নির্বাচিত চেয়ারম্যান। কিন্তু আমার লোকজন আজ পোস্টার লাগাতে পারছে না। ভোটারদের দুয়ারে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আওয়ামী মনোনীত প্রার্থীর সমর্থকরা আমার বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আমি সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমার বিশ্বাস দ্রুতই নির্বাচনী আমেজ ও পরিবেশ ফিরে আসবে।
সুয়াপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাফিজুর রহমান সোহরাব বলেন, তারা সকালে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বের হয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় পেছন থেকে এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা আমাকে প্রচুর মারধর করে। আমি এখনো সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি রয়েছি। আমার অন্তত ১০ থেকে ১২ লোক আহত হয়েছেন। তারাও হাসপাতালে ভর্তি। বর্তমানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনের মাঠে নামলেই হামলা করছে দলীয় প্রার্থীরা।
এ ব্যাপারে নৌকা মনোনীত প্রার্থী আজহার আলী বলেন, তারা আমার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেছি। তাদের একজন কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে দলীয় প্রার্থী কফিল উদ্দিনের ছেলে হান্নান বলেন, সোহরাবের লোকজনই আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমাদের তিনজন আহত হয়েছে। আমার ভাইয়ের আঙুল কেটে দিয়েছে তারা।
সোমভাগ ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেন বলেন, প্রতীক বরাদ্দের দিন এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে আমি ডাউটিয়া এলাকায় যাই। সেখানে মসজিদ থেকে নামাজ আদায় করে বের হওয়ার সময় অতর্কিত হামলা চালান নৌকা মনোনীত প্রার্থী আজহার আলীর লোকজন। এ ঘটনায় আমিসহ আমার ১০ থেকে ১২ জন লোক আহত হয়। এ ঘটনায় মামলা হলে একজনকে আটক করা হয়। পরে তারা তাদের নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুর করে আমাদের লোকজনের নামে মিথ্যা মামলা করে। আজও পোস্টার লাগাতে গেলে আমার এক কর্মীর ওপর হামলা চালায়। গুরুতর আহত হলে তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
কুল্লা ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, আমার পোস্টারের ওপর অন্য প্রার্থীর পোস্টার লাগিয়েছে।
ঢাকার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই আচরণবিধি মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে। নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে তা জানিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব প্রার্থীদের। একজন ভোটার বাড়ি থেকে বের হয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দেবে, নিরাপদে ফিরে আসবে। আগামীকাল থেকে যারা নিয়ম মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শতভাগ আইনের প্রয়োগ করা হবে। আর কোনো অভিযোগ যেন না আসে, সবার প্রতি হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তবে এ বক্তব্য প্রদানের কয়েক ঘণ্টা পরেই সোমভাগ ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেনের কর্মীকে বেধড়ক মারধর করেন নৌকা মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা। অন্যদিকে রোয়াইল ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীকে মারধর করেন নৌকার লোকজন। এ সময় একটি ভ্যানও ভাঙচুর করা হয় বলে দাবি স্বতন্ত্র প্রার্থী শামসুদ্দিন মিন্টুর।
এনএ