কাজিরহাট-আরিচা রুটে পারের অপেক্ষায় ৫ শতাধিক যানবাহন
পাবনার কাজিরহাট-আরিচা রুটে ফেরিসংকট কাটিয়ে উঠার দুসপ্তাহ পর আবার যানজট সৃষ্টি হয়েছে। পাঁচটি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছিল। ফেরিঘাটে ছিলনা কোনো ট্রাকের দীর্ঘ সাড়ি। অনায়াসে পারাপার হচ্ছিল যানবাহন। কিন্তু হঠাৎ করেই এখান থেকে দুটি বড় ফেরি অন্যত্র নিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। এতে দুই পাড়ে আটকা পড়েছে পাঁচ শতাধিক যানবাহন। ৫ কিলোমিটারজুড়ে রয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি।
শনিবার (৩০ অক্টোবর) সকালে কাজিরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বুধবার দুপুর থেকে বেগম রোকেয়া ও সুফিয়া কামাল নামে ফেরি দুটি এখান থেকে অন্য ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বর্তমানে শাহ মখদুম, গোলাম মওলা, ফেরি কুমিল্লা, ফেরি কপোতি ঘাটে অবস্থান করলেও মূলত কুমিল্লা নামে ফেরিতে কোনো ট্রাক বা বড় যানবাহন পারাপার করা যায় না।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার সকালে কপোতি ফেরিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে সেটি মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। আজ বিকেল নাগাদ সেটি আমরা ঘাটে পেতে পারি। দুটি ফেরি দিয়ে এখন যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। অন্য ঘাটে যানবাহনের চাপ না থাকলেও নতুন নতুন বড় ফেরি দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখানে যাত্রী-যানবাহনের চাপ বেশি থাকলেও পুরাতন ফেরি দেওয়া হয়।
সরেজমিনে কাজিরহাট ফেরিঘাটে দেখা গেছে, ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন যানবাহন শ্রমিকরা। দূরপাল্লার যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। ট্রাক টার্মিনাল, আবাসিক হোটেল, পাবলিক টয়লেট, যাত্রীছাউনি ও লাইটিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় ট্রাকচালকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সব মিলিয়ে ঘাট হয়েছে ট্রাক শ্রমিকদের গলার কাটা।
যাত্রী ও যানবাহনের চালকেরা অভিযোগ করেন, এই নৌপথে কমপক্ষে ৮ ফেরির প্রয়োজন। সম্প্রতি ৫টি ফেরি দিয়েছিল ঘাট কর্তৃপক্ষ। ঘাটে দুই সপ্তাহ যাবত কোনো যানজট ছিল না। অনায়াসে আমরা পারাপার হয়েছি। কিন্তু আজ ৩/৪ দিন ঘাটে ব্যাপক যানবাহনের চাপ থাকলেও এখান থেকে বড় ফেরি দুটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও বিআইডব্লিউটিসির নাম প্রকাশে একাধিক কর্মী জানান, এই ঘাটে যতটি ফেরি দেওয়া হয়েছে সবই পুরোনো ও ত্রুটিযুক্ত। তাই এই পরিবর্তনে সংকট আরও বেড়েছে। দু-একদিন পরই ফেরিতে যান্ত্রিক ক্রুটি দেখা দেয়।
কাজিরহাট ঘাটে কথা হয় কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে আগত পাথর ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এক আজ ৪ দিন ধরে ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করছি। সিরিয়াল পাওয়া তো দূরের কথা। আরও চার-পাঁচদিন ঘাটে অবস্থান করা লাগতে পারে। একটি ফেরিতে ৩-৪টি করে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে।
লালমনিরহাটের বুড়িমারি স্থলবন্দর থেকে এসেছেন আব্দুল কুদ্দুস নামের এক ট্রাকচালক । তিনি বলেন, দিনের পর দিন এখানে অবস্থান করলেও ঠিকমতো ফেরির দেখা পাইনি। এখানে আবাসিক হোটেল, বাথরুম, টার্মিনাল নেই। নিরাপত্তার জন্য একটি লাইটও লাগানো নেই। সব সময় চুরি-ডাকাতির ভয় থাকে। ডাকাতির ভয়ে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না।
আমিনপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলম বলেন, পণ্যবাহী ট্রাকচালকদের নিরাপত্তায় সারারাত পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে। ডাকাতি বা অর্থ চুরি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান তিনি।
বিআইডব্লিউটিসির কাজিরহাট ঘাটের ব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, মাত্র দুটি তিনটি বা চারটি ফেরি দিয়ে এই নৌপথ পরিচালনা করা যাচ্ছে না। যেভাবে কাজিরহাট ঘাটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে, তাতে প্রতিদিন ফেরিগুলোর ৩০ থেকে ৩৫টি ট্রিপের প্রয়োজন। অথচ তিনটি ফেরি দিয়ে ১০ থেকে ১২টি ট্রিপ দেওয়া যাচ্ছে।
রাকিব হাসনাত/এমএসআর