নামের মিলে বিনা দোষে কারাভোগ, ৩৪ দিন পর মুক্তি
কোনো অপরাধ না করেও বিনা দোষে ৩৪ দিন কারাভোগ শেষে মুক্তি পেলেন ভোলা সদর উপজেলার একটি মাদরাসার অফিস সহকারী মো. শাজাহান মুন্সী (৪৬)। শুধুমাত্র নিজের ও বাবার নামে কিছুটা মিল থাকায় বিনা দোষে হত্যা মামলায় তাকে কারাভোগ করতে হয়।
এ নিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টসহ একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি আদালত ও পুলিশ প্রশাসনের নজরে আসে। বিষয়টি আমলে নিয়ে বিজ্ঞ আদালত নিরপরাধ শাজাহান মুন্সীকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন।
বিজ্ঞাপন
শাজাহান মুন্সীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (২৩ অক্টোবর) ঢাকার বিশেষ দায়রা জজ আদালত-১ এর ভারপ্রাপ্ত বিশেষ দায়রা জজ মুহাম্মদ আলী হোসাইন সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে মুক্তির আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশে বুধবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে তাকে মুক্তি দেয় ভোলা জেলা কারা কর্তৃপক্ষ।
শাজাহান মুন্সী ভোলা সদর পূর্ব ইলিশা নেছারিয়া মাদরাসার অফিস সহকারী পদে কর্মরত।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্বাস উদ্দীন আহমেদ বলেন, এই মামলার ওয়ারেন্ট অফিসারের ভুলের কারণে মো. শাজাহান মুন্সীকে এক মাস পাঁচ দিন বিনা দোষে জেল খাটতে হয়েছে। এতে তার সম্মানহানি ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন আদালত। একই সঙ্গে মো. শাজাহান মুন্সীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
কারামুক্তির পর শাহাজাহান মুন্সী বলেন, আমি মাদরাসার অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি করি। ওইদিন মাদরাসায় র্যাব-পুলিশ একসঙ্গে গিয়ে আমাকে বলে আমার নামে মামলা আছে। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। পরে আমাকে মামলার কাগজপত্র না দেখিয়ে চোখে কালো কাপড় বেঁধে টেনেহিঁচড়ে থানায় নিয়ে আসে। থানা থেকে ওইদিনই কোর্টে নিয়ে সেখান থেকে কারাগারে প্রেরণ করে।
তিনি আরও বলেন, বিএ পাস করা চার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। এক ছেলে আছে। আমাদের সমাজে চলাফেরা করতে হয়। এ ঘটনায় আমার অনেক মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। পাশাপাশি আমার পরিবারের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আমি সরকারের কাছে এই মানহানির বিচার চাই এবং ক্ষতিপূরণ চাই।
শাহাজাহান মুন্সীর মেয়ে শাহানাজ বেগম বলেন, আমার বাবার মুক্তিতে আমরা সন্তুষ্ট। আমার বাবার নামে মামলার পরে আমাদের মানহানি হয়েছে। আমরা নানাভাবে নানা যায়গায় লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছি। আমাদের পথে পথে ঘুরতে হয়েছে। অনেক কষ্টের পরে আমার বাবার মুক্তি মিলেছে। আমার বাবা সামান্য অফিস সহকারী পদে চাকরি করেন। পুলিশের ভুলের কারণে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা এর ক্ষতিপূরণ চাই।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালের ২০ মার্চ ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন বাঘার হাওলা গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চৌকিদার বাড়ির স্থায়ী বাসিন্দা আবদুল আজিজের ছেলে মো. হানিফ ওরফে শাহাজাহানের ঢাকার সবুজবাগ এলাকায় আপন বড় ভাই রফিকুল ইসলামের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। এর জের ধরে বড় ভাই রফিকুল ইসলামকে হত্যা করেন মো. হানিফ ওরফে শাহাজাহান। এ ঘটনায় রফিকুল ইসলামের স্ত্রী বাদী হয়ে সবুজবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।
এ ঘটনায় পুলিশ তখন মামলার প্রধান আসামি মো. হানিফ ওরফে শাহাজাহানকে গ্রেফতার করে। আদালতের মাধ্যমে দীর্ঘ চার বছর কারাভোগ করেন তিনি। এরপর জামিনে বেরিয়ে এসে দুবার আদালতে হাজির দিয়ে তারপর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিহতের স্ত্রী ও মো. হানিফ ওরফে শাহাজাহানকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাদের গ্রেফতারে ওয়ারেন্ট জারি হয়।
মামলার প্রধান আসামি ভোলা জেলার বাসিন্দা হওয়ায় মামলাটি ভোলা সদর মডেল থানায় আসে। তখন ভোলা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কবির সঠিক নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই না করেই গত ২৩ সেপ্টেম্বর নিরপরাধ মো. শাজাহান মুন্সীকে তার কর্মস্থল পূর্ব ইলিশা নেছারিয়া মাদরাসা থেকে সাদাপোশাকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেন মো. শাহাজাহান মুন্সীর পরিবার।
ইমতিয়াজুর রহমান/আরএআর