ভোলার মাছঘাটে বাড়ছে কর্মব্যস্ততা, হতাশ জেলেরা
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরগরম হয়ে উঠেছে ভোলার মাছঘাটগুলো। কর্মব্যস্ততা বেড়েছে জেলেপল্লি বরফকল ও মৎস্য আড়তগুলোয়। জেলে, পাইকার, আড়তদার ও ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠেছে মাছঘাট ঘাটগুলো।
মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা, তুলাতলী, নাছির মাঝি, ভোলার খাল, কোড়ার হাটসহ বিভিন্ন মাছঘাট ঘুরে দেখা মেলে এমন চিত্রের।
বিজ্ঞাপন
জেলেরা নৌকা ট্রলার থেকে মাছ নিয়ে ঘাটে আসছেন বিক্রির জন্য, কেউ মাছ বাছাই করছেন, কেউ প্যাকেটিংয়ে ব্যস্ত, কেউ নিলাম ডাকছেন। সব মিলিয়ে কর্মব্যস্ত সময় যাচ্ছে তাদের। তবে অনেক জেলেই হতাশ। কারণ আশানুরূপ ইলিশ মিলছে না।
মাছঘাটগুলোয় দেড় কেজি ওজনের ইলিশ মাছের হালি বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকায়, ১ কেজি ২০০ গ্রাম ইলিশের হালি বিক্রি হয় সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা, ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ইলিশের হালি বিক্রি হয় ২৮০০ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা, আর ৫০০ গ্রাম ইলিশের হালি বিক্রি হয় ১৬০০ থেকে ২২০০ টাকায়। ভোলার ইলিশ রাজধানী ঢাকা, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার মোকামে যায়।
ভোলার তুলাতুলি মাছঘাটের জেলে মো. মিলন বলেন, টানা ২২ দিন অভিযানের পরে কাইল রাইত ১৪০০ টাকার তেল পুইরা ৫ জন ভাগিদার লইয়া গাঙ্গে গেছি। সকালে ঘাডে মাছ বেচছি আড়াই হাজার টাকার। কোন কামের পয়সাও হয়নাই, বদলার পয়সাও হয়নাই।
একই রকম বলেন মজিবল হক, অভিযানের সময় আমাগো অনেক কষ্ট হইছে। অভিযানের পরে রাইত নদীত খেও লইছি। যেই মাছ পাইছি হেতে পোষে না, তেল আর বদলায় হমান হমান থাহে। আমরা অনেক দেনা হইয়া গেছি। সামনের দিকে যদি আল্লায় মাছ দেয় তয় আমরা এই দেনা ক্লিয়ার করতে পারমু।
অন্যদিকে সাগর মোহনায় মাছ শিকার করেন ভোলার দৌলতখান মাছঘাটের মাঝি আব্দুর মালেক মিস্ত্রি। তিনি বললেন ভিন্ন কথা, বর্তমানে সেই মাছ এখন জালে পরতেছে। সামনে অমাবস্যা আছে। এভাবে যদি জালে মাছ পড়তে থাকে, তাইলে আমাদের যেই ধারদেনা আছে, তা পরিশোধ কইরা দুইডা ডাইল-ভাত খাইতে পারমু।
তুলাতুলি মাছঘাটের আড়তদার মো. নাছিম মিয়া বলেন, অভিযানের আগে আমরা যে রকম নদীতে মাছ আশা করেছিলাম, এখন তার কিছুটা পাওয়া গেছে। এ রকম যদি আরও কয়েক দিন নদীতে মাছ থাকে আর জেলেরা তা ধরতে পারে, তবে জেলেদের যেই ঘাটতি আছে, তা পূরণ হবে। আমরাও ঢাকা, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা মাছ পাঠাতে সক্ষম হব।
ভোলা জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মো. এরশাদ ফরাজি বলেন, সরকার অভিযান দিছে মাছে ডিম ছাড়ার জন্য। অভিযান শেষ মাছে নদীতে ডিম ছাড়ছে এই ডিমগুলা রক্ষা করার জন্য নদীতে অবৈধ খুডা জাল, বিন্দি জাল, মশারি জাল ফেলার বিরুদ্ধে সরকারকে দৃষ্টি রাখতে হবে। তা না হলে এই অভিযানের কোনো সফলতা আসবে না।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম জানান, অভিযান শেষে প্রথম দিন জেলেরা মোটামুটি ভালো মাছ পেয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এতে জেলেরা খুশি। অভিযান সফল হওয়ায় নদীতে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে।
ইমতিয়াজুর রহমান/এনএ